প্রশ্ন । শ্রেণি কাকে বলে ?
উত্তর : একই জাতীয় ব্যক্তি বা বস্তু সমষ্টিকে শ্রেণি বলে । যার অন্তর্গত প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তু বিশেষ কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । যেমন — ‘মানুষ’, যার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি ।
প্রশ্ন । শ্রেণির সাবেকী ধারণা বলতে কী বােঝ ?
উত্তর : শ্রেণির সাবেকী ধারণা অনুসারে দাবি করা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সদস্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও , একটি বিশেষ বিষয়ে যদি তাদের মধ্যে মিল দেখা যায় , তাহলে সাধারণ গুণের ভিত্তিতে এই সমস্ত সদস্যকে একই শ্রেণিভুক্ত করা যায় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যতই পার্থক্য পরিলক্ষিত হােক্ না প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ‘মনুষ্যত্ব’ নামক গুণটি বিদ্যমান থাকে । এই সাধারণ গুণের জন্যই সব মানুষকে ‘মানুষ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।
প্রশ্ন । শ্রেণির আধুনিক ধারণা বলতে কী বােঝ ?
উত্তর : শ্রেণির আধুনিক ধারণা বলতে বােঝায় ‘শ্রেণি’ শব্দটিকে সহজ ও ব্যাপকতর অর্থে গ্রহণ করা । এখানে একটি ‘শ্রেণি’ বলতে একটি পদকে বােঝায় ।
শূন্য । শ্রেণি কাকে বলে ?
উত্তর : যে শ্রেণির অন্তর্গত কোনাে সদস্যকে উল্লেখ করা সম্ভব নয় , সেই শ্রেণিকেই বলা হয় শূন্য শ্রেণি । অন্ততপক্ষে একজন সদস্যেরও অস্তিত্ব নেই । উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে ,আকাশ -কুসুম , শশকশৃঙ্গ , বন্ধ্যাপুত্র , মৎস্যকন্যা প্রভৃতি পদগুলি হল শূন্য শ্রেণি ।
প্রশ্ন । পরিপূরক শ্রেণি বলতে কী বােঝ ?
উত্তর : পরিপূরক শ্রেণি বলতে বােঝায় , এমন শ্রেণি যা মূল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয় । অর্থাৎ , পরিপূরক শ্রেণি এমন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় যারা মূল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয় । যেমন — মানুষ শ্রেণির পরিপূরক শ্রেণি হল অ - মানুষ । ছাত্র শ্রেণির পরিপূরক শ্রেণি হল অ -ছাত্র ।
প্রশ্ন । বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য বলতে কী বােঝ ?
উত্তর : যখন কোনাে বচন একটি বিশেষ বস্তুর অস্তিত্বকে নির্দেশ করে , তখন বলা হয় বচনটির অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে । যেমন - ‘বইটি হয় টেবিলের ওপর’ । এই বচনটির মাধ্যমে আমরা একটি বিশেষ বস্তুর নিদের্শ পাই ।
অন্যভাবে , যখন কোনাে বচনের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য পদ দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণির অন্তর্গত কমপক্ষে একটি ব্যক্তি বা বস্তুর অস্তিত্ব সূচিত হয় তখন বলা হয় বচনটির অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে । অর্থাৎ, শ্রণিটি কখনই শূন্যগর্ভ নয় ।
যেমন — ‘আমার টেবিলের ওপর কলম আছে’ , বচনটির অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য বিদ্যমান । আবার যদি বলা হয় - যে ‘সেখানে কোনাে পরী নেই’ । তাহলে বচনটির অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে বলে দাবি করা যায় না । কারণ বাস্তবে পরীর অস্তিত্ব নেই বলে ‘পরী’ নির্দেশিত বচনটির কোনাে অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য নেই ।
প্রশ্ন । সাত্ত্বিক বা অস্তিত্বমূলক বচন কী ?
উত্তর : যে বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য থাকে তাকেই বলা হয় সাত্ত্বিক বচন । অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য বহনকারী একই বচনের দুটি নাম — সাত্ত্বিক ব্যঞ্জনামূলক এবং অস্তিত্বমূলক বচন ।
প্রশ্ন । সাত্ত্বিক বা অশূন্য পদ কী ?
উত্তর : যে পদ নির্দেশিত যখন কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুর বাস্তব অস্তিত্ব থাকে , তখন তাকে বলা হয় সাত্ত্বিক পদ । যেমন — ‘টেবিলে বই আছে’ বললে বইটির বাস্তব অস্তিত্ব নির্দেশিত হয় ।
প্রশ্ন । অর্সাত্ত্বিক বা শূন্য পদ কাকে বলে ?
উত্তর : যে পদের দ্বারা বাস্তবে অস্তিত্বশীল কোনাে ব্যক্তি বা বস্তু নির্দেশিত হয় না, তাকে অসাত্ত্বিক বা শূন্যপদ বলা হয় ।
যেমন — ‘মৎস্যকন্যার নেই’ , বললে মৎস্যকন্যার অনস্তিত্বশীলতা প্রমাণিত হয় ।
প্রশ্ন । কোনাে কোনাে প্রেতাত্মা হয় শেক্সপীয়রের নাটকে অস্তিত্বশীল এবং কোনাে কোনাে দেব - দেবী হয় ইলিয়াডে বর্ণিত — এই দুটি বচনের অস্তিত্বশীলতার বর্ণনার ভাবনা ব্যাখ্যা করাে ।
উত্তর : ওপরের বচনদ্বয় বিশেষ বিশেষ বচন বলে বিবেচিত । যদিও বিশেষ বচনের সাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা আছে, তবুও ওপরে উল্লেখিত বচন দুটির ‘সাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা আছে’ দাবি করা সঙ্গত নয় । কারণ ওই দুটি বচন নির্দেশিত শ্রেণি সদস্য বাস্তবে অনস্তিত্বশীল ।
কিন্তু কিছু যুক্তিবিজ্ঞানী বিশেষ করে কোপি বলেন বাস্তবে নয় , কিন্তু প্রেতাত্মা বা দেব দেবী নাটকে অস্তিত্বশীল । তাই এদের বা আপাত ব্যতিক্রমী বচনগুলিরও অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে । অর্থাৎ (1+O) বচন = অস্তিত্বশীল ।
প্রশ্ন । সাত্ত্বিক বা অন্য শ্রেণি কাকে বলে ?
উত্তর : সাত্ত্বিক পদ দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণিই সাত্ত্বিক বা অশূন্য শ্রেণি । মনে রাখতে হবে এই শ্রেণির অন্ততপক্ষে একজন সদস্যও অস্তিত্বশীল ।
প্রশ্ন । অসাত্ত্বিক বা শূন্যগর্ভ শ্রেণি কী ?
উত্তর : শ্রেণির, ব্যক্তি বা বস্তু হিসেবে কোনাে সদস্যই থাকে না, তাকেই শূন্যগর্ভ শ্রেণি বলা হয় ।
প্রশ্ন : কোন্ কোন্ বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে ?
উত্তর : নিরপেক্ষ বচন গােষ্ঠীভুক্ত I ও 0 বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে । অন্যভাবে বললে সাবেকী যুক্তিবিজ্ঞানে যারা বিশেষ বচন ( I, O ) বলে পরিচিত তাদের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য আছে ।
প্রশ্ন । কোন্ কোন্ বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য নেই ?
উত্তর : নিরপেক্ষ বচন গােষ্ঠীভুক্ত A ও E বচনের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য নেই । অন্যভাবে বললে সাবেকী যুক্তিবিজ্ঞানে যারা সামান্য বচন ( A , E ) বলে পরিচিত তাদের অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য নেই ।
প্রশ্ন । একক শ্রেণি কী ?
উত্তর : যখন কোনাে শ্রেণির একটিমাত্র সদস্য থাকে তখন তাকে একক শ্রেণি বলা হয় । যেমন — ‘পৃথিবী’ একটি একক শ্রেণি ।
প্রশ্ন । পরিপূরক শ্রেণি কাকে বলে ?
উত্তর : পরিপূরক শ্রেণি বলতে বােঝায় এমন শ্রেণি যা মূল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয় অর্থাৎ , পরিপূরক শ্রেণি এমন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় যারা মূল শ্রেণির অন্তর্গত নয় । যেমন — মানুষ শ্রেণির পরিপূরক শ্রেণি হল অ -মানুষ । ছাত্র শ্রেণির পরিপূরক শ্রেণি হল অ -ছাত্র ।
একটি শ্রেণি অপর শ্রেণির সঙ্গে আংশিকভাবে যুক্ত হতে পারে , আবার পূর্ণভাবেও যুক্ত হতে পারে । যখন শ্রেণি পূর্ণভাবে যুক্ত হয় তখন একটি শ্রেণি অপর শ্রেণিরসম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে । যখন আংশিক যুক্ত হয় তখন একটি শ্রেণি অপর শ্রেণির আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলা যেতে পারে । আবার এমন বলা যায় , একটি শ্রেণি অপর শ্রেণির বিপরীত ।