উত্তর : একটি বচনে সাধারণত দুটি পদ থাকে । উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদ । যখন কোনাে পদের সম্পূর্ণ ব্যাক্তার্থকে গ্রহণ করা বা স্বীকার করা হয় তখন পদটি ব্যাপ্য হয়, আর যখন আংশিক ব্যাক্তার্থকে গ্রহণ করা হয় তখন পদটি অব্যাপ্য হয় ।
যেমন — A — সব মানুষ হয় দ্বিপদ ।
ওপরের উদাহরণে ‘মানুষ’ পদটি ব্যাপ্য হয়েছে , কারণ এর সম্পূর্ণ ব্যাক্তার্থকে গ্রহণ করা হয়েছে । কোন্ বচন কোন্ পদকে ব্যাপ্য করে ?
A - বচন শুধু উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে , বিধেয়কে ব্যাপ্য করে না ।
E - বচন উদ্দেশ্য, বিধেয় উভয়কেই ব্যাপ্য করে ।
I - বচন কোনাে পদকেই ব্যাপ্য করে না ।
O - বচন শুধুমাত্র বিধেয়কে ব্যাপ্য করে ।
A — সব মানুষ হয় মরণশীল ।
[ ] ওপরের উদাহরণটি সামান্য সদর্থক বা ‘ A ’ বচনের উদাহরণ । এখানে উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ’ এবং বিধেয় পদ “ মরণশীল ” — এই বিধেয় পদটি সকল মানুষ সম্পর্কেই স্বীকার করা হয়েছে । অর্থাৎ, উদ্দেশ্য পদটির সমগ্র ব্যাক্তার্থ গ্রহণ করা হয়েছে । এর ফলে মানুষ পদটি ব্যাপ্য হয়েছে । কারণ এখানে মানুষ পদটির আগে ‘সকল’ শব্দটি ব্যবহার করে এই পদটির সমগ্র ব্যাক্তার্থ গ্রহণ করা হয়েছে । কিন্তু বিধেয় পদ “ মরণশীল ” ব্যাপ্য না অব্যাপ্য তা স্পষ্ট বলা হয়নি । “ মরণশীল ” বলতে মানুষ ছাড়াও গােরু , ঘােড়া , কুকুর , অন্যান্য ইতর জীবকে বােঝায় । মরণশীল প্রাণীদের একটি অংশ হল “ সকল মানুষ ”। সুতরাং , “ মরণশীল ” বিধেয় পদটির সম্পূর্ণ ব্যাক্তার্থকে গ্রহণ করা হয়নি ।
অতএব " A ” বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য , বিধেয় পদ অব্যাপ্য ।
E — কোনাে নিরামিষভােজী নয় আমিষভােজী ।
[ ] ওপরের উদাহরণটি সামান্য নঞর্থক বা ‘E’ বচনের উদাহরণ । এখানে উদ্দেশ্য পদ “ নিরামিষভােজী ” ও বিধেয় পদ “ আমিষভােজী ”।
এই বচনটিতে ঘােষণা করা হয়েছে যে নিরামিষভােজী শ্রেণির কোনাে সভ্যই , পুরুষ হােক্ বা স্ত্রী হােক আমিষভােজী নয় । এর অর্থ হল নিরামিষভােজী শ্রেণির কোনাে সভ্যই , পুরুষ হােক্ বা স্ত্রী হাে “ আমিষভােজী ” নয় । আমিষভােজী এর অ র্থহল নিরামিষভােজী , এই সমগ্র শ্রেণিটি “ আমিষভােজী ” এই শ্রেণিরব হির্ভূত । কাজেই E বচন উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় । অপরপক্ষে , যখন এই কথা বলা হচ্ছে যে ,“ নিরামিষভােজী ” এই সমগ্র শ্রেণিটি “ আমিষভােজী ” এই শ্রেণির বহির্ভূত । তখন এই বিষয়টিতে ঘােষণা করছে যে , “আমিষভােজী” এই সমগ্র শ্রেণিটিও “ নিরামিষভােজী ” এই শ্রেণির বহির্ভূত । কাজেই E বচনে বিধেয় পদটি ব্যাপ্য ।
‘কোনাে নিরামিষভােজী নয় আমিষভােজী’ — এই বচনটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে “সমস্ত নিরামিষভােজী” এবং “ সমস্ত আমিষভােজী ” এদের মধ্যে কোনাে সম্পর্ক নেই ।
সুতরাং , E বচন উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদকেই ব্যাপ্য করে ।
‘I’— কোনাে কোনাে বালক হয় পরিশ্রমী ।
এটি বিশেষ সদর্থক বা ‘I’ বচনের উদাহরণ । এখানে উদ্দেশ্য পদ “বালক” আর বিধেয় পদ “ পরিশ্রমী ” । এই বচনটিকে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, “বালক” এই শ্রেণির প্রতিটি সভ্যের এবং “ পরিশ্রমী ” এই শ্রেণির প্রতিটি সভ্যের সম্পর্কে কোনাে ঘােষণা করা হয়নি । “বালক” শ্রেণিটি “ পরিশ্রমী” শ্রেণিটির সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্ত বা সম্পূর্ণ বহির্ভূত নয় । বচনটিতে আংশিক পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে স্বীকার করা হয়েছে ।
সুতরাং , I বচনে কোনাে পদই ব্যাপ্য নয় ।
‘ 0 ’ – কোনাে কোনাে ফুল নয় গােলাপ ।
এটি একটি বিশেষ নঞর্থক বা 'O' বচনের উদাহরণ । এখানে উদ্দেশ্য পদ “ফুল”, বিধেয় পদ “ গােলাপ ”। এখানে ফুল এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ফুলের কথা বলা হয়নি । “ ফুল ” শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত কোনাে কোনাে ফুলের কথা বলা হয়েছে । এখানে এই “ ফুল ” এই শ্রেণির কোনাে কোনাে সদস্য সমগ্র গােলাপ ফুলের যে শ্রেণি , তার বহির্ভুক্ত । বচনটিতে যে কয়েকটি ফুলের কথা বলা হয়েছে “গােলাপ শ্রেণির কোনাে সদস্যই তাদের মধ্যে উপস্থিত নেই । আসলে যখন কোনাে কিছুকে কোনাে একটি শ্রেণির বহির্ভূত মনে করা হয় তখন সমগ্র শ্রেণিটির বহির্ভূত মনে করা হয় ।
সুতরাং , “ O ” বচনে বিধেয় পদটি ব্যাপ্য , উদ্দেশ্য পদ নয় ।