লকের প্রতীকরূপী বস্তুবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর লকের প্রতীকরূপী বস্তুবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে loker protikrupi bostubad somporke alochona koro


উত্তর :  জ্ঞাতা যা জানে তাকে ‘বস্তু’ আখ্যা দেওয়া হয় । এই বস্তুকে কেন্দ্র করে দর্শনের ইতিহাসে দুটি মত প্রচলিত আছে - ভাববাদ ও বস্তুবাদ । 

বস্তুবাদ কাকে বলে : আধুনিক দর্শনে বস্তুবাদ বলতে বােঝায় সেই মতবাদ যাতে দাবী করা হয় যে , জড়বস্তুর অথবা ভৌতবস্তুর মননিরপেক্ষ এবং ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে । 

বস্তুবাদ সাধারণত তিন প্রকার : সরল বস্তুবাদ , বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ ও প্রতীকরূপী বস্তুবাদ । এখন লক্‌ - এর প্রতীকরূপী বস্তুবাদ আলােচনা করছি । 

লক্‌ - এর প্রতীকরূপী বস্তুবাদ : যদিও দেকার্তের দর্শনে প্রতীকরূপী বস্তুবাদের সন্ধান মেলে , তবুও অভিজ্ঞতাবাদী ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক্ কে এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা বলে গণ্য করা হয় । লক্‌ বলেন , বাহ্যজগতে মননিরপেক্ষ ভৌতবস্তু আছে । কিন্তু এই বস্তুগুলি স্বরূপত যেরকম , আমরা বস্তু সম্পর্কে সেরকম জ্ঞান সবসময় লাভ করি না । ভৌতবস্তুগুলি নানাপ্রকার গুণ ও ধর্মবিশিষ্ট । কিন্তু গুণগুলির যে ধারণা বা প্রতিরূপ আমরা জানি বা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় হয় । সেই ধারণাগুলির সবই যে গুণগুলির সদৃশ তা বলা যায় না । লক্ বলেন ভৌতবস্তুর মধ্যে যে শক্তি থাকে এবং যে শক্তি আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে প্রভাবিত করে মনে ধারণা উৎপন্ন করতে পারে সেই শক্তিকে গুণ বলে । উদাহরণস্বরূপ ভৌতবস্তুর কোনাে শক্তি আমাদের চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করার জন্য আমাদের মনে বর্ণের সংবেদন উৎপন্ন হয় । এই বর্ণের সংবেদনটি হচ্ছে ধারণা । অনুরূপভাবে ভৌতবস্তুর অন্যান্য শক্তির দ্বারা অর্থাৎ গুণের দ্বারা আমাদের মনের আকার , আয়তন , ওজন প্রভৃতির সংবেদন তথা ধারণা জন্মায় । যেহেতু লকের মতে প্রতিরূপ বা ধারণার মাধ্যমে ভৌতবস্তুর ধর্ম বা গুণগুলিকে জানা যায় , সাক্ষাৎভাবে ধর্মগুলিকে বা গুণগুলিকে জানতে পারি না , সেইজন্য লক্‌ - এর মনবাদকে প্রতীকরূপী বস্তুবাদ বা পরােক্ষ বস্তুবাদ বলা হয় । 

মুখ্যগুণ ও গৌণগুণ : লক্ ভৌতবস্তুর শক্তির দ্বারা উৎপন্ন ধারণাগুলিকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করেছেন - ( ১ ) মুখ্যগুণ ও ( ২ ) গৌণগুণ । 

বস্তুর আকার , আয়তন , কাঠিন্য , বিস্তৃতি , সংখ্যা , গতি , ওজন প্রভৃতি হল মুখ্যগুণের উদাহরণ । কারণ , এই ধারণাগুলির ঠিক অনুরূপ বা সদৃশ্য গুণ বস্তুতে আছে । 

অন্যদিকে বর্ণ , স্বাদ , উষ্ণতা , শব্দ ,গন্ধ প্রভৃতির ধারণাগুলি গৌণগুণের ধারণা । যেহেতু এই ধারণাগুলি ঠিক অনুরূপ বা সদৃশ গুণ বস্তুতে নেই , তবে ওই ধারণা উৎপন্ন করার একপ্রকার শক্তি ভৌতবস্তুতে আছে । 

মুখ্যগুণ বস্তুগত , গৌণগুণ মনােগত : লক্ মুখ্য গুণগুলিকে বস্তুগত ধর্ম বলেছেন । কারণ , তিনি বলেন এই গুণগুলির অস্তিত্ব আমাদের ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে না । মুখ্য গুণগুলির মনিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে , এগুলি বস্তুগত । অন্যদিকে গৌণগুণগুলি বস্তুগত নয় , এগুলি মনােগত । 

সাক্ষাৎভাবে জানতে পারি না : লক্ বলেন কী মুখ্যগুণ , কী গৌণগুণ কোনাে গুণকেই আমরা সাক্ষভাবে জানতে পারি না । পরােক্ষভাবে সেগুলি ধারণার মাধ্যমে জানতে পারি । যেহেতু জ্ঞেয় বস্তু হল দুটি - ( ১ ) ধারণা ও ( ২ ) ভৌতবস্তুর গুণ । সেইজন্য লক্‌ এর মতবাদকে জ্ঞানতাত্ত্বিক দ্বৈতবাদ বলা হয় । 


সমালােচনা : ( ১ ) লকের প্রতীকরূপী বস্তুবাদের বিরুদ্ধে বলা যায় , এই মত অনুসরণ করলে ভৌতজগতের জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করতে অসুবিধা হয় । ( ২ ) প্রতীকরূপী বস্তুবাদকে কেউ কেউ আত্মঘাতী মতবাদ বলতে চেয়েছেন । প্রতীকরূপী বস্তুবাদের হেতুবাক্য হল যে , ভৌতবস্তুর মননিরপেক্ষ অস্তিত্ব বর্তমান এবং তার ফলে আমরা ওই গুণগুলির ভাবনা লাভ করি ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন