কান্ট - এর ভাববাদ ব্যাখ্যা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর কান্ট এর ভাববাদ ব্যাখ্যা কর kant ar vabbad bakkha koro

উত্তর : জ্ঞান সম্পর্কীয় আলােচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ‘জ্ঞেয়’ বা যাকে জানা যায় । জ্ঞেয় বিষয়কেই বস্তু আখ্যা দেওয়া হয় । এই বস্তুকে কেন্দ্র করে দর্শনের ইতিহাসে দুটি মতবাদ পাওয়া যায় । যথা —ভাববাদ ও বস্তুবাদ । 



ভাববাদ কাকে বলে : যে মতবাদে বাহ্যবস্তু তথা ভৌতবস্তুর বা জড়বস্তুর মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না ,বরং দাবী করা হয় যে বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব সর্বদাই জ্ঞাননির্ভর বা মননির্ভর অথবা বাহ্য বস্তু স্বরূপত মানসিক বা আধ্যাত্মিক , তাকেই ভাববাদ বলা হয় । বার্কলে , কান্ট, হেগেল প্রভৃতি দার্শনিক ভাববাদী বলে পরিচিত । 


বার্কলে দ্রব্যের মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন । কিন্তু কান্ট বলেন , জ্ঞানের বিষয় জ্ঞানের উপর নির্ভর করে । কান্টই সর্বপ্রথম স্বীকার করেন যে , জ্ঞানের ফলে জ্ঞাত বিষয় মনােগত ধর্ম আরােপিত হয় , জ্ঞাত হয় বলে জ্ঞান উপাদান বিন্যস্ত হয় এবং জ্ঞানের বিষয় রচিত হয় । জ্ঞাত বিষয়ের যে সব ধর্মকে আমরা বস্তুগত ধর্ম মনে করি তাদের অনেকগুলাের অস্তিত্ব জ্ঞাতার উপর নির্ভরশীল । মন তার পূর্বতসিদ্ধ আকার প্রকার দিয়ে জগৎ রচনা করে বলে স্বয়ং সৎ বস্তুর জ্ঞান হয় না । 


দার্শনিক কান্ট হিউমের মতবাদের বিরুদ্ধে বস্তুজগৎ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন । কান্ট পরিষ্কার বলেছেন যে , মন - নিরপেক্ষ বস্তুর স্বতন্ত্র সত্তা আছে । এ হল অতিন্দ্রিয় জগতের সত্তা । এই জগৎ আমাদের কাছে যেরূপ প্রকাশিত হয় আমরা জগৎকে ঠিক সেইভাবেই জানতে পারি । প্রকৃতপক্ষে জগৎ স্বরূপত যা তাকে সেইভাবে কখনই জানা যায় না । 


কান্ট মনে করেন , আমাদের সংবেদনের উৎস হল এই মন - নিরপেক্ষ অতিন্দ্রিয় জগৎ । ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বস্তুর অতিন্দ্রিয় সত্তা অতিন্দ্রিয় আত্মার সংবেদন উৎপন্ন করে । কান্টের মতে , বস্তুর দুটি দিক — একটি হল অবসিক দিক বা বস্তুর প্রকাশিত রূপ এবং অপরটি হল বস্তুর অতিন্দ্রিয় সত্তা বা বস্তুর যথার্থ স্বরূপ । কান্ট বলেন , বস্তুর যথার্থ স্বরূপ আমাদের কাছে কতকগুলি সংবেদন সৃষ্টি করে । দেশ ও কালের আকার নিয়ে সংবেদনগুলি যখন মনের কাছে উপস্থিত হয় , মন সংবেদনগুলির উপর কতকগুলি বােধজাত আকার অর্থাৎ দ্রব্য , কার্যকারণ , একত্ব ইত্যাদি আরােপ করে এবং তখনই জ্ঞান উৎপন্ন হয় । 


সংবেদন বিষয়গত নয় , সংবেদন হল আত্মগত । একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে , দেশ , কাল , দ্রব্যত্ব , বহুত্ব প্রভৃতি প্রত্যয়গুলি একমাত্র অবসিক জগতের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হতে পারে । প্রকৃতপক্ষে অতিন্দ্রিয় জগৎ আমাদের কাছে কখনই ধরা পড়ে না । এই জগৎ হল অবসিক জগৎ । কান্টের ভাববাদ অনুসারে অতিন্দ্রিয় জগতের উপর অবসিক জগতের কোন কিছু আরােপ করা যায় না । 

 

কান্ট পরিষ্কার বলেছেন যে , প্রাকৃত জগৎ মিথ্যা নয় । এই প্রাকৃত জগৎকে আমরা , দেশ , কাল , দ্রব্যত্ব , বহুত্ব , একত্ব কার্যকরণ সম্পর্ক প্রভৃতির মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি । উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি , কান্টের ভাববাদ একটু স্বতন্ত্র ধরনের । সুতরাং বস্তুস্বরুপের দিক দিয়ে বিচার করলে কান্টের ভাববাদী দার্শনিক রূপ চিহ্নিত করা যায় না । কান্টের মতে দেশঙ্খিত বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় পােষণ করা অযৌক্তিক ।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন