উত্তর : নানান কারণে বার্কলের আত্মগত ভাববাদকে মেনে নেওয়া যায় না । নীচে তা আলােচনা করা হল
( ১ ) মুর - এর সমালােচনা : বস্তুবাদী দার্শনিক মূর তাঁর ‘ভাববাদ খন্ডন’ নামক গ্রন্থে বার্কলের আত্মগত ভাববাদের তীব্র সমালােচনা করেছেন । তাঁর মতে , বার্কলের ‘অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর তত্ত্বটি আসলে ভুল । কারণ বস্তুর সত্তা আছে বলেই তার প্রত্যক্ষ সম্ভব । যদি বস্তু না থাকতাে তাহলে তাকে প্রত্যক্ষ করা যেত না । তাই মূর মনে করেন বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার ওপর নির্ভর করে না ।
( ২ ) আলেকজান্ডারের সমালােচনা : ব্রিটিশ দার্শনিক আলেকজান্ডার মূরের মতােই বলেন যে আমরা যখনই কোনাে বস্তুকে জানি তখনই সেটিকে জ্ঞাত বস্তু হিসেবেই জানি । কিন্তু একথা বলা যায় না যে , কোনাে বস্তু জ্ঞাত না হয়ে থাকতে পারে না ।
( ৩ ) সাধারণ মানুষের সমালােচনা : বার্কলের বক্তব্য আমাদের সাধারণ বুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় । সাধারণ মানুষ মননিরপেক্ষ কোনাে বস্তু বাহ্য জগতে থাকতে পারে না - একথা মেনে নিতে পারে না ।
( ৪ ) বস্তু ও বস্তুর জ্ঞান অভিন্ন : বস্তু ও বস্তুর জ্ঞান ভিন্ন । যেমন – গােলাপের দিকে তাকালে দেখব - গােলাপ হয় লাল রঙের ,গাছের দিকে তাকালে দেখব গাছ হয় সবুজ রঙের । এক্ষেত্রে বিষয়ের বিভিন্নতার জন্য জ্ঞানের বিভিন্নতা হয়েছে ।
( ৫ ) পদার্থ বিদ্যার বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরােধী বার্কলের মত : বাইরের জগতের জড়দ্রব্যের অস্তিত্ব আছে – এই ধারণা নিয়েই পদার্থবিদ্যা উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছে । বার্কলের যুক্তি মেনে নিলে পদার্থবিদ্যার সত্যগুলি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করা হয়ে থাকে । তাহলে আমাদের মেনে নিতে হবে বার্কলের বক্তব্যই ভুল ।
( ৬ ) ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা : বার্কলে একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক । অভিজ্ঞতায় যা পাওয়া যায় না তার অস্তিত্ব নেই । তাহলে প্রশ্ন হল ঈশ্বরের ধারণা বার্কলে পেলেন কোথা থেকে ? কারণ অভিজ্ঞতায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না । তাহলে ঈশ্বরের ধারণার উৎস কী ? বার্কলে এর ব্যাখ্যা আর দিতে পারেননি ।
( ৭ ) আত্মকেন্দ্রিকতা দেখা দেয় : বার্কলের মতবাদকে মেনে নিলে বস্তুর স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করা যায় না । ধরা যাক , একটি বই ঘরে রেখে গেলাম , এক ঘন্টা পরে ফিরে এসে দেখি বইটি ওখানেই আছে । বার্কলের মতে , যতক্ষণ আমরা বইটি প্রত্যক্ষ করি ততক্ষণই বস্তুর অস্তিত্ব আছে । তাহলে প্রশ্ন হল – যখন আমি বাইরে গেলাম তখন বইটির কি অস্তিত্ব নেই ? বার্কলে যদি ঈশ্বর প্রকল্পের সাহায্য না নিতেন তাহলে সমস্ত জগৎটাই ব্যক্তিমনের ধারণায় পরিণত হত এবং কেবলমাত্র আমি ও আমরা ধারণারই অস্তিত্ব আছে এরূপ আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ দেখা দিত । এজন্য অনেকে বলেন – বার্কলের ভাববাদের অনিবার্য পরিণতি হল আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ ।