১। ‘জৈন’ কথাটির উৎস কি ?
উত্তর : ‘জৈন’ কথাটি এসেছে জিন থেকে ‘জিন’ শব্দের উৎপত্তি ‘জি’ ধাতু থেকে , যার অর্থ জয় করা বা জয়ী হওয়া । জয় করা বলতে রাগ , দ্বেষ প্রভৃতি রিপুগুলিকে জয় করার কথা বলা হয়েছে । যারা এই রিপুগুলিকে জয় করেছেন তাদেরই জৈন বলা হয় । তীর্থঙ্কররা রিপুগুলিকে জয় করেছেন বলে তীর্থঙ্করদেরই জিন বলা হয় ।
২। জৈন দর্শনের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে ?
উত্তর : জৈন দর্শন কোনাে একজন ব্যক্তি বা তীর্থঙ্কর কর্তৃক সৃষ্ট নয় । ২৪ জন তীর্থঙ্কর হলেন জৈন দর্শনের প্রবর্তক । এর মধ্যে সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর হলেন ঋষভদের এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর হলেন বর্ধমান , যিনি মহাবীর নামে পরিচিত ।
৩। জৈন সম্প্রদায় কয়টি ও কি কি ?
উত্তর : জৈনদের সম্প্রদায় দুটি — শ্বেতাম্বর এবং দিগম্বর । শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ভুক্ত জৈনরা শ্বেতবস্ত্র পরিধান করা উচিত বলে মনে করেন । অন্যদিকে , দিগম্বর সম্প্রদায়ের মতে , সন্ন্যাসীর কোনাে সম্বল থাকবে না । বস্ত্রও একপ্রকার সম্বল । কাজেই জৈন সন্ন্যাসী হবে নগ্ন ও সম্বলহীন ।
৪। জৈন মতে যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় বা প্রমাণ কয়টি ও কি কি ?
উত্তর : জৈন মতে , যথার্থ জ্ঞানলাভের উপায় বা প্রমাণ তিনটি — ( ১ ) প্রত্যক্ষ , ( ২ ) অনুমান এবং ( ৩ ) শব্দ ।
৫। মতি কি ?
উত্তর : মতি হল ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান । ইন্দ্রিয় দু’প্রকার — বাহ্য ও মানস । চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা জিহ্ এবং ত্বক — এই পাঁচটি হল বহিরিন্দ্রিয় , এগুলি দ্বারা বাহ্য প্রত্যক্ষ হয় । আর , মন দ্বারা মানস প্রত্যক্ষ হয় । এছাড়া , অনুমান , স্মৃতি , প্রত্যভিজ্ঞা ইত্যাদি সমস্ত প্রকার জ্ঞানই মতি ।
৬। শ্ৰত কি ?
উত্তর : কোনাে শাস্ত্র গ্রন্থ থেকে অথবা বিশ্বাসযোেগ্য কোনাে ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানই শ্রুত । অন্যান্য দর্শনে একেই শব্দ বলা হয় । শ্রুত হল পরােক্ষ জ্ঞান ।
৭। অজীব কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : জৈন মতে , অজীব চার প্রকার । যথা — পুদগল , ধর্ম , অধর্ম , ও আকাশ ।
৮। সিদ্ধ পুরুষ কে ?
উত্তর : যে ব্যক্তি কেবল জ্ঞানের অধিকারী তিনিই জৈন মতে সিদ্ধ পুরুষ । সমীম ব্যক্তি জৈন দর্শন পাঠের দ্বারা সর্বজ্ঞপুরুষ হতে পারেন ।
৯। বন্ধন কি ?
উত্তর : কর্মের জন্য কষায় উৎপন্ন হয় । কষায়ের জন্য পুদগল আকর্ষণ , পুদগল আকর্ষণের জন্য দেহ প্রাপ্তি এবং দেহপ্রাপ্তির জন্য বন্ধন ।
১০। বন্ধন কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : জৈন মতে বন্ধন দু’প্রকার — ভাববন্ধন ও দ্রব্যবন্ধন , ভাব বা সংস্কারের জনা যে বন্ধন তাই ভাববন্ধন । আর , ভাব বন্ধনের ফলে জীব যখন পুদেগলে আবদ্ধ হয় তখন তাকে দ্রব্য বন্ধন বলে ।
১১। ত্রিরত্ন কি ? কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : মােক্ষলাভের ক্ষেত্রে জৈন নীতিতত্ত্বে যে তিনটি উপদেশ দেওয়া হয়েছে , সেই তিনটি উপদেশকেই একত্রে ত্রিরত্ন বলে । ‘ত্রিরত্ন’ অর্থাৎ রত্ন তিনটি । এই তিনটি রত্ন হল — ( ১ ) সম্যগ দর্শন , ( ২ ) সম্যাগ জ্ঞান এবং ( ৩ ) সম্যগ চারিত্র ।
১২। ব্রত কি ? ব্রত কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : মােক্ষ বা মুক্তি লাভের সহায়ক কর্মকেই ব্রত বলে । ব্রত পাঁচ প্রকার । যথা — অহিংসা , অস্তেয়, অনৃত বা সত্য , ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ ।
১৩। হিংসা কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : হিংসা তিন প্রকার । যথা - ( ১ ) কায়িক হিংসা অর্থাৎ কোন প্রাণীকে হত্যা না করা , ( ২ ) বাচিক হিংসা অর্থাৎ কটুবাক্য দ্বারা কাউকে আঘাত না করা , এবং ( ৩ ) মানসিক হিংসা অর্থাৎ অন্যের ক্ষতি বা অমঙ্গলের চিন্তা না করা ।
১৪। জৈনরা মােক্ষলাভের জন্য কোন কোন কর্মের কথা বলেছেন ?
উত্তর : মােক্ষ বা মুক্তির জন্য কর্ম দুটি — নির্জরা এবং সংবর ।
১৫। জৈন মতে প্রমাণ কয়টি ও কি কি ?
উত্তর : জৈন মতে প্রমাণ তিনটি — প্রত্যক্ষ , অনুমান এবং শব্দ ।
১৬। প্রত্যক্ষ প্রমাণ কাকে বলে ? প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : যে প্রমাণ অন্য প্রমাণের উপর বা অন্য কোনাে জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না তাই প্রত্যক্ষ প্রমাণ । প্রত্যক্ষ দু- প্রকার । যথা — সংব্যবহারিক এবং পারমার্থিক প্রত্যক্ষ ।
১৭। জৈন মতে জ্ঞান কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : জৈন মতে জ্ঞান দু’প্রকার – লৌকিক জ্ঞান এবং কেবল জ্ঞান ।