বৌদ্ধ দর্শন

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বৌদ্ধ দর্শন bouddho dorshon


১। বৌদ্ধদর্শনের প্রবর্তক কে ? 

উত্তর : বৌদ্ধদর্শনের প্রবর্তক হলেন গৌতম বুদ্ধ। যিনি বুদ্ধদেব নামে পরিচিত । তার প্রকৃত নাম সিদ্ধার্থ । বােধি লাভের পর তিনি বুদ্ধদেব নামে পরিচিত হন ।


২। বােধি বা বুদ্ধ কথার অর্থ কি ? 
 
উত্তর : বােধি বা বুদ্ধ কথার উৎপত্তি বুধ ধাতু থেকে , যার অর্থ — জাগানাে বা জাগ্রত হওয়া । কাজেই , ব্যুৎপত্তিগত অর্থে বােধি বা বুদ্ধ কথার অর্থ জাগানাে  বা জাগ্রত হওয়া । 


৩। বৌদ্ধদর্শনের মূল গ্রন্থ কি ? 

উত্তর : বুদ্ধদেব নিজে কোন গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেননি । তবে তার শিষ্যরা বুদ্ধদেবের বাণী ও উপদেশগুলি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করেন । বুদ্ধদেবের বাণী ও উপদেশ যে সকল গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে পিটক বলা হয় । তাই বৌদ্ধদর্শনের মূল গ্রন্থ হল ত্রিপিটক । 

৪। পিটক শব্দের অর্থ কি ? পিটক কয়টি ও কি কি ? 

উত্তর : ‘পিটক’ শব্দের অর্থ ঝাঁপি বা পাত্র । পিটকের সংখ্যা তিনটি । যথা — সূত্ত বা সূত্র পিটক , বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক । এই তিনটি পিটককে একত্রে ত্রিপিটক বলা হয় । 


৫। আর্যসত্য কি ? 

উত্তর : বুদ্ধদেব গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যে মূল সত্যের উপলব্ধি করেছিলেন পরবর্তীকালে তা সমস্ত মানুষের কল্যাণে প্রচার করেন । তাঁর উপলব্ধ সত্যগুলিই আর্যসত্য নামে পরিচিত । 


৬। আর্যসত্য কয়টি ও কি কি ? বা আর্যসত্য চতুষ্টয় কী কী ? 

উত্তর : বুদ্ধদেব মােট চারটি সত্য উপলব্ধি করেছিলেন । কাজেই , আর্যসত্য চারটি যথা—  ( ১ ) জগতে দুঃখ আছে , ( ২ ) দুঃখের কারণ আছে (৩ ) দুঃখ নিরােধ বা দুঃখের নিবৃত্তি আছে এবং (৪ ) দুঃখ নিরােধমার্গ বা দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে ।


৭। দ্বাদশ নিদান কি ? 

উত্তর : বৌদ্ধ দর্শনে ‘দ্বাদশ নিদান’ বলতে ১২ টি কারণকেই বুঝিয়েছেন । এই বারােটি কারণ হল ( ১ ) অবিদ্যা , (২ ) সংস্কার (৩ ) বিজ্ঞান বা চেতনা , ( ৪) নাম ও রূপ ( ৫ ) ষড়ায়তন ( ৬ ) স্পর্শ, (৭ ) বেদনা , (৮ ) তৃষ্ণা, (৯ ) উপাদান , ( ১০ ) ভব ( ১১ ) জাতি এবং ( ১২ ) জরা - মরণ ।



৮। ভবচক্র কি ? 

উত্তর : ‘ভবচক্র’ বলতে বৌদ্ধ দর্শনের জন্ম ও মৃত্যুর আবর্তনকে বােঝানাে হয়েছে । ‘ভবচক্রে’র  ‘ভব’ অর্থ হওয়া বা জন্মানাে আর ‘চক্র’ অর্থাৎ চাকা । জন্ম-মৃত্যুর  চাকা হল বারবার জন্ম ও মৃত্যু হওয়া ।



৯। বৌদ্ধ দর্শনে কি আত্মার অস্তিত্ব স্বীকৃত হয়েছে ? 

উত্তর : বৌদ্ধ দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে । কিন্তু তারা স্থায়ী , নিত্য, শাশ্বত কোন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না । বৌদ্ধ মতে আত্মা হল ক্ষণিক বিজ্ঞান - সন্তান বা বিজ্ঞান প্রবাহ ।



১০। পঞ্চস্কন্ধ কি ? 

উত্তর : পঞ্চস্কন্ধের অর্থ স্তম্ভ পাঁচটি । বৌদ্ধ দর্শনে পঞ্চস্কন্ধকেই আত্মা বলা হয়েছে । পঞ্চস্কন্ধ বলতে পাঁচটি স্কন্ধকে বােঝানাে হয়েছে । এই পাঁচটি স্কন্ধ হল – (১ ) রূপ স্কন্ধ , (২) বিজ্ঞান স্কন্ধ, (৩ ) বেদনা স্কন্ধ, ( ৪ ) সংজ্ঞা স্কন্ধ এবং ( ৫ ) সংস্কার স্কন্ধ । 

১১। ‘মার্গ’ শব্দের অর্থ কি ? 

উত্তর : ‘মার্গ’ শব্দের অর্থ পথ বা উপায় । বুদ্ধদেব চতুর্থ আর্যসত্যের আলােচনায় দুঃখ : নিবৃত্তির যে উপায়ের কথা বলেছন বা পথ নির্দেশ করেছেন তাই মার্গ । 

১২। মার্গ কয়টি ও কি কি ? 

উত্তর : বৌদ্ধদর্শনের চতুর্থ আর্যসত্যের আলােচনায় বুদ্ধদেব অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা বলেছেন । কাজেই , মার্গের আটটি অঙ্গ । এগুলি হল- ( ১ ) সম্যক দৃষ্টি, ( ২ ) সম্যক্ সঙ্কল্প, ( ৩ ) সম্যক্ বাক্ ( ৪ ) সম্যক কর্মান্ত, ( ৫ ) সম্যক্ আজীব , ( ৬ ) সম্যক , ব্যায়াম্ ( ৭ ) সম্যক্ স্মৃতি এবং (৮ ) সম্যক সমাধি । 


১৩। বিজ্ঞান কি ? 

উত্তর : বিজ্ঞান বা চেতনার কারণ হল অতীত সংস্কার । বিজ্ঞান বা চেতনার কারণেই জীব মাতৃগর্ভে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে । 


১৪। ষড়ায়তন কি ? 

উত্তর : ‘ষড়ায়তন’ কথাটির ‘ষট’ কথার অর্থ ছয়টি আর আয়তন বলতে ইন্দ্রিয়কেই বােঝানাে হয়েছে । কাজেই , ষড়ায়তনের অর্থ ছয়টি ইন্দ্রিয় । এই ছয়টি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে — চক্ষু, কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা এবং ত্বক এই পাঁচটিকে বাহ্যইন্দ্রিয় এবং মনকে অন্তঃ ইন্দ্রিয় বলে । 

১৫। স্পর্শ কি ? 

উত্তর : স্পর্শ বলতে বােঝায় সংযােগকে । সংযােগ বলতে ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের সংযােগের কথা বলা হয়েছে , যার ফলে বিষয় সম্পর্কে বােধ জন্মায় । 


১৬। বেদনা কি ? 

উত্তর : বেদনা হল ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের স্পর্শ বা সংযােগ দ্বারা যে সুখ -দুঃখের অনুভূতি হয় তাই বেদনা । 


১৭। তৃষ্ণা কি ? 

উত্তর : কোনাে বিশেষ ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের সংযােগ ঘটলে ওই বস্তু ভােগের যে বাসনা বা কামনা তাই তৃষ্ণা । তৃষ্ণা থেকেই বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বা আসক্তি জন্মায় । 


১৮। উপাদান কি ? 

উত্তর : উপাদান তৃষ্ণা থেকে বিষয়ের প্রতি যে অনুরাগ বা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয় তাই উপাদান । কাজেই , উপাদানের কারণ হল তৃষ্ণা । 

১৯। ভব কি ? 

উত্তর : ‘ভব’ শব্দটি ভূ ধাতু থেকে এসেছে , যার অর্থ হওয়া , হওয়া বলতে জন্মগ্রহণ করার কথাই বলা হয়েছে । 

২০। জাতি কি ? 

উত্তর : ভব বা জন্মানাের ইচ্ছাই হল জাতির কারণ । ‘জাতি’ কথাটি জাত বা জন্মানো অর্থের প্রকাশক । ফলে , জন্মগ্রহণ করাই জাতি । জীবের জন্মগ্রহণ করার ইচ্ছার জন্যই জীব জন্মগ্রহণ করে । 

২১। জরা -মরণ কি ? 

উত্তর : জরা - মরণ বলতে বৃদ্ধ বা জীর্ণ অবস্থা এবং মরণ বলতে মৃত্যুকে বােঝায় । কাজেই , জরা -মরণ হল জন্ম হলেই তার মৃত্যুর হবে । কাজেই , জন্মানােই মৃত্যুর কারণ । 

২২। শূন্যবাদ কি ? 

উত্তর : শূন্যবাদের অর্থ সবকিছুই শূন্য । এবং শূন্যই একমাত্র সৎ বস্তু । মহাযান সম্প্রদায়ভুক্ত মাধ্যমিক বৌদ্ধরা শূন্যকে একমাত্র সৎ বলায় তাদের দার্শনিক মতবাদকেই শূন্যবাদ বলা হয় 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন