উত্তর : প্রাণের মূল প্রকৃতি সম্পর্কে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায় । ফলত এই প্রসঙ্গে তিনটি মতবাদ লক্ষ্য করা যায় - ( i ) যন্ত্রবাদ ( ii ) প্রাণবাদ ( iii ) ভাববাদ ।
এখন প্রাণবাদ নিয়ে কিছু আলােচনা
প্রাণ ও জড় দুটি ভিন্ন শক্তি : এই মতবাদ ঘােষণা করে যে , প্রাণশক্তি ও জড়শক্তি দুটি ভিন্ন ও স্বতন্ত্র শক্তি । জীব যে আত্মসংরক্ষণ , আত্মবিকাশ , বংশবিস্তার প্রভৃতি কাজ করতে পারে , তা প্রাণশক্তির জন্যই । মনে রাখতে হবে প্রাণ থেকেই প্রাণের উৎপত্তি , জড় থেকে নয় । সেইজন্য এই মতবাদ জীবযােনি বা বায়ােজেনেসিস নামে পরিচিত । এখানে একটি বিষয় উল্লেখযােগ্য যে , প্রাণশক্তিই জড়শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
প্রাণবাদের দুটি রূপ — প্রাচীন প্রাণবাদ ও নব্য প্রাণবাদ । অ্যারিস্টটল এই মতবাদের স্রষ্টা । তার মতে , প্রাণশক্তি একটি বিশিষ্ট শক্তি এবং উদ্ভিদ , প্রাণী ও মানুষের মধ্যে এই শক্তির প্রত্যক্ষ ঘটে থাকে । অ্যারিস্টটল এই প্রাণশক্তির নাম দিয়েছেন Entelechy বা ‘দেহের সংগঠনী শক্তি’। নব্য প্রাণবাদীরাও প্রাচীনদের সঙ্গে অনেকাংশে একমত । তবে তারা বলেন , প্রাচীনদের মতবাদে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে । এর প্রধান প্রবক্তা ড্রিশ প্রাণকে কখনও দেহের সংগঠনী শক্তি আবার কখনও মানসিক সত্তা হিসাবে কল্পনা করেছেন । তার মতে প্রাণশক্তি বা Elanvital হচ্ছে এই বিশ্বের মূলতত্ত্ব । এই প্রাণশক্তি সর্বদা নতুন নতুন সৃষ্টির নেশায় মত্ত এবং সদা ক্রিয়াশীল ।
প্রাণশক্তির পক্ষে যুক্তি : ( i ) প্রত্যেক প্রাণশক্তি বা জীবদেহেরই এমন একটি সুসামঞ্জস্য সংগঠন আছে যার যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয় ।
( ii ) যন্ত্রের কাজের ভবিষ্যৎবাণী সম্ভব কিন্তু জীব কখন কি কাজ করবে তা আগে থেকে বলা যায় না ।
( iii ) প্রাণবাদীরা বলেন যে, উচ্চতর প্রাণীর বেলায় জৈবিক ক্রিয়ার যান্ত্রিক ব্যাখ্যার সম্ভাব্যতায় বিশ্বাস করা যায় না ।
সমালােচনা : ( i ) প্রথমেই এর বিরুদ্ধে বলা যায়, প্রাণের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার জন্য জীবদেহে প্রাণশক্তি নামে এক অজ্ঞাত শক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে ।
( ii ) তৃতীয় যুক্তিটি মােটেই গ্রহণযােগ্য নয় । কারণ , প্রাণের যান্ত্রিক ব্যাখ্যা ইতিহাসে আজ যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভবিষ্যতে তাই সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ার অনেক নজির আছে ।