উত্তর : ‘বিবর্তন’ বলতে যা অপ্রকাশিত ও প্রচ্ছন্নতার প্রকাশ ও প্রকট হওয়া বােঝায় । যা এখন অপ্রকাশিত রয়েছে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে ক্রমশ প্রকাশিত হওয়া বা ব্যক্ত হওয়াকেই বিবর্তন বলে ।
বিপ্লব বলতে বােঝায় “নতুনের আনয়ন” । হঠাৎ পরিবর্তনকে বিপ্লব বলা হয় । বিপ্লবের কোন সর্বজনীন তত্ত্ব নেই । বিপ্লব শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে প্রয়ােগ করা হয় । বিপ্লব সামাজিক অর্থনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় হতে পারে , যে অর্থই হােক না কেন সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন সূচিত করে । এখন উভয় - এর মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য আলােচনা করছি ।
( i ) অভিব্যক্তি বিবর্তন স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ।কোন বস্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি বা নিয়মের ক্রিয়ার ফলে বিবর্তন বা অভিব্যক্তি ঘটে থাকে । কিন্তু বিপ্লবের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে তা স্বতঃস্ফূর্ত বা স্বাভাবিক নয় ।
( ii ) বিবর্তনের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনটি আসে সেটি ধীর , ক্রমিক ও সুশৃঙ্খল । অন্যদিকে , বিপ্লবের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে সেই পরিবর্তন আকস্মিকভাবে ঘটে ।
( iii ) বিবর্তনের ধারা সাধারণত ক্রমিক ও অনবচ্ছিন্ন । অন্যদিকে বিপ্লব ক্রমিক পরিবর্তন নয় । বিবর্তনের ক্ষেত্রে পুরাতনের মধ্যে নতুনের প্রবেশ ঘটে । বিপ্লবের ক্ষেত্রে পুরাতন ব্যবস্থা ধ্বংস করে নতুনের আবির্ভাব হয় ।
( iv ) বিবর্তন সাধারণত প্রাকৃতিক ব্যাপার । এখানে ব্যক্তির বিশেষ কিছু করার নেই। অন্যদিকে বিপ্লব আর্থ - সামাজিক ব্যাপার । এটি মানুষের দ্বারা সক্রিয়ভাবে সংঘটিত হয় বা পরিচালিত হয় ।
আমার মনে হয় কি প্রাকৃতিক , কি অর্থনৈতিক , কি সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বিপ্লব এবং বিবর্তন উভয়ের ভূমিকা আছে । জীবজগতের ক্ষেত্রে বিবর্তনের মধ্য দিয়েই এক জীব থেকে আজকের মানুষ এসেছে । আবার হঠাৎই পরিবর্তন না থাকলেও বা ‘মিউটেশন’ না থাকলে আজকের মানুষ আসত না । তাই প্রাকৃতিক এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই বিপ্লব এবং বিবর্তন উভয়ের ভূমিকা আছে ।