কান্টের মতে তত্ত্ববিদ্যা কী সম্ভব ? আলােচনা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর কান্টের মতে তত্ত্ববিদ্যা কী সম্ভব আলােচনা কর kanter mote tothobidda ki somvob alochona koro


উত্তর : ‘ Critique of pure Reason ’ গ্রন্থের প্রথম এবং দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় কান্ট তত্ত্ববিদ্যা সম্ভব কিনা এই পশ্ন উত্থাপন করেছেন । কান্ট প্রশ্ন করেছেন তত্ত্ববিদ্যা কি তত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে বর্ধিত করতে পারে ? কান্টের মতে তত্তবিদ্যার প্রধান সমস্যা হল ঈশ্বর , স্বাধীনতা এবং অমরতা । 

কান্ট তত্ত্ববিদ্যার আলােচ্য বিষয়ের গুরুত্বকে কখনও অস্বীকার করেননি । কিন্তু মনে করেন , যে তত্ত্ববিদ্যাকে এক সময় সমস্ত বিজ্ঞানের কেন্দ্রমণি বলে গণ্য করা হতাে , সেই তত্ত্ববিদ্যা তার পূর্বের মর্যাদা হারিয়েছে । আসল কথা হল , পদার্থবিদ্যার মতাে তত্ত্ববিদ্যা কোনাে সুনিশ্চিত পদ্ধতি খুঁজে পায়নি, যে পদ্ধতি প্রয়ােগ করে সে তার সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে । কোনাে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম এমন কোনাে নির্ভরযােগ্য পদ্ধতি খুঁজে বার করতে না পারার জন্য তত্ত্ববিদ্যার অগ্রগতি পদে পদে ব্যাহত হয়েছে । বস্তুত যাঁরা এই উদাসীনতা দেখান তারাও অনেক সময় নিজেদের অজ্ঞাতে তত্ত্ববিদ্যা সম্পর্কীয় উক্তি করে থাকেন । কান্টের মতে এই ঔদাসীন্যের মূলে রয়েছে মানুষের অলীক জ্ঞান বা ভ্রান্ত বিজ্ঞানে পরিতৃপ্ত না হওয়ার প্রবণতা । 

বিচারমূলক অনুসন্ধানের প্রকৃতি : প্রশ্ন হল , এই বিচারমূলক অনুসন্ধানের রূপটা কী হবে ? এই বিচারমূলক অনুসন্ধানের কাজ কোন্ পথ ধরে অগ্রসর হবে ? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য কান্ট তত্ত্ববিদ্যা বলতে কি বুঝেছেন সেটা আমাদের জানা প্রয়ােজন । লক এর এই মতবাদের সঙ্গে কান্ট একমত হতে পারেননি । এই মতবাদের বিরুদ্ধ মতবাদ অর্থাৎ অন্তর ধারণার অস্তিত্ব আছে ; এই মতবাদও কান্ট গ্রহণ করেননি । কান্ট বিশ্বাস করেন যে , এমন প্রত্যয় এবং নিয়মের অস্তিত্ব আছে যা মানুষ বুদ্ধি , অভিজ্ঞতার সময় নিজের মধ্য থেকে উদ্ভব করতে পারে । 

এটি একটি অভিজ্ঞতাই পূর্ব ধারণা এই অর্থে যে , এটি অভিজ্ঞতা - প্রসূত নয় । এইসব ধারণা বা প্রত্যয়গুলি শুদ্ধ এই অর্থে যে এগুলি সকল প্রকারের অভিজ্ঞতামূলক উপাদান বর্জিত । কান্ট- পূর্ব তত্ত্ববিদ্যার অনুমান করেছেন যে, বস্তু যেভাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় শুধুমাত্র তাদের উপলব্ধির ক্ষেত্রে নয় , অতীন্দ্রিয় সত্তা এবং স্বরূপতঃ বস্তু – এদের উপলব্ধি করার জন্য বুদ্ধি , সব ধারণা এবং নিয়মের প্রয়ােগ করা যেতে পারে । কান্ট মনে করেন , এর ফলে , একাধিক বিচার বিযুক্তবাদী তত্ত্ববিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে । বিচার বিযুক্তবাদের প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে কান্ট বলেন , এ হল এই অনুমান যে মানুষের বুদ্ধি বহুদিন ধরে যে নিয়মগুলিকে প্রয়ােগ করতে অভ্যস্ত সেই নিয়মগুলিকে প্রয়ােগ করে শুদ্ধ দার্শনিক প্রত্যয়ের ভিত্তিতে জ্ঞানের অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব । 

যে বিচারের সামনে তত্ত্ববিদ্যাকে উপস্থিত হতে হবে সেটি আর কিছু নয় , শুদ্ধ প্রজ্ঞার নিজেরই বিচারমূলক অনুসন্ধানের কাজ । 

যদি কান্টের সঙ্গে একমত হয়ে আমরা সিদ্ধান্ত করি চিন্তনমূলক তত্ত্ববিদ্যা একটি অভিজ্ঞতাবর্জিত বিজ্ঞান যা অভিজ্ঞতাকে অতিক্রান্ত করে যাওয়ার দাবী করে এবং অভিজ্ঞতা - পূর্ব প্রত্যয় ও নিয়মের সাহায্যে সম্পূর্ণরূপে বুদ্ধিগম্য ( অতীন্দ্রিয় ) সত্তার জ্ঞানলাভ করতে সচেষ্ট হয় তাহলে এই দাবীর যথার্থতা উপরের প্রশ্নের উত্তরের সাহায্যেই অর্থাৎ, মন অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর না করে কি এবং কতটুকু জানতে পারে তা নিরূপিত হবে । 

সিদ্ধান্ত : কান্ট তত্ত্ববিদ্যাকে বিভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেছেন , তিনি স্বাভাবিক প্রবণতা হিসাবে তত্ত্ববিদ্যা , এবং বিজ্ঞান হিসাবে তত্ত্ববিদ্যা , এই উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করেছেন । ঈশ্বর , অমরতা প্রভৃতি সমস্যা উত্থাপন করার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা মানুষের মনে আছে । 

স্বাভাবিক প্রবণতা হিসাবে তত্ত্ববিদ্যা বাস্তব এবং সেহেতু স্পষ্টতঃই সম্ভব । কিন্তু বিজ্ঞান হিসাবে তত্ত্ববিদ্যা যদি এর দ্বারা অতীন্দ্রিয় সত্তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বােঝানাে হয় , কান্টের মতে কখনও বাস্তব নয় । কাজেই প্রশ্ন হল বিজ্ঞান হিসেবে তত্ত্ববিদ্যা সম্ভব কিনা , এ প্রশ্ন থেকেই যায় ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন