কান্টের বিচারবাদ সবিচারে আলােচনা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর কান্টের বিচারবাদ সবিচারে আলােচনা কর kanter bicharbad sobichare alochona koro


উত্তর : অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদ জ্ঞানােৎপত্তি বিষয়ে এই দুটি মতবাদের কোনটিই সন্তোষজনক নয় । জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদীদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করার চেষ্টা করেছেন । জ্ঞানােৎপত্তি সংক্রান্ত যে মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন তা বিচারবাদ নামে অভিহিত । জ্ঞানের উৎস কী এ ব্যাপারে কান্ট গভীরভাবে চিন্তা করে অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদের সমন্বয়মূলক এক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন । 

দেশ ও কাল : কান্টের মতে মানব মন বাইরে থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংবেদন গ্রহণ করে , এইসব সংবেদন পরস্পর স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন । কান্ট এদের নাম দিয়েছেন বিভিন্ন প্রকার ইন্দ্রিয়ানুভূতি । এইসব  সংবেদনকে যদি স্বতন্ত্রভাবে নেওয়া যায় তবে তাদের কোনাে অর্থই হয় না এবং তারা আমাদের কোনাে জ্ঞানদানও করতে পারে না । কান্ট জ্ঞান ক্রিয়াকে তিনটি অঙ্গে ভাগ করেছেন । যেমন ইন্দ্রিয়ানুভূতি বােধ এবং বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা কোনাে কিছুকে অনুভব বা প্রত্যক্ষ করতে গেলেই তাকে দেশ ও কালে প্রত্যক্ষ করতে হয় । দেশ ও কালের ধারণা বস্তুস্বরূপ নেই । বস্তু স্বরূপ আমাদের মনে যেসব বিচ্ছিন্ন সংবেদনের সৃষ্টি করে , আমাদের ইন্দ্রিয়ানুভূতি তাদের ওপর দেশকাল রূপে আকারের ছাপ ফেলে তাদের অর্থবহ করে তােলে । ইন্দ্রিয়ানুভূতির অন্তনিহিত আকার অর্থাৎ ‘দেশ’ ও ‘কাল’ এর ছাপ মেরে দেয় । দেশ ও কালের আকারের মাধ্যমে উপস্থাপিত সংবেদনগুলি জ্ঞানের উপাদান মাত্র । যেমন – দ্রব্য , কার্যকারণত্ব , সমগ্ৰত্ব , বহুত্ব প্রভৃতি আরােপ করে সংবেদনগুলিকে সুসংহত করে , ইন্দ্রিয়ানুভূতির আকারসমূহের কোনটি বস্তু স্বরূপ নেই , অর্থাৎ এরা অভিজ্ঞতালব্ধ নয় ।  

জ্ঞানের ক্ষেত্রে কান্ট ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বােধ ছাড়া মনের আর একটি বৃত্তির উল্লেখ করেছেন – তা বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা , ইন্দ্রিয়ানুভূতি ছাড়া কান্ট যখন ‘বুদ্ধি’-র কথা বলেন , তখন তিনি বুদ্ধি বলতে মনের এমন বৃত্তিকে নির্দেশ করেন যার সাহায্যে মন তার  অন্তনিহিত আকার বা ধারণাকে এমন একটি ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করে যেখানে কোন ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা নেই। সােজা কথায় , বুদ্ধির নিজস্ব মূলনীতিগুলি ইন্দ্রিয়াতীত ক্ষেত্রে প্রযােজ্য । 
 
নির্বিচার বােধ : কান্টের মতে অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদ উভয়ই নির্বিচার মতবাদ । জ্ঞানের স্বরূপ ও উপাদান সম্পর্কীয় সঠিক আলােচনা না থাকার জন্যই এইরূপ একপেশে মতবাদ এর উদ্ভব হয়েছে । তাই কান্ট বলেছেন জ্ঞানের উৎস কী তা নির্ণয় করার সময় কী কী উপাদান ও শর্ত উপস্থিত থাকলে জ্ঞান- এর উৎপত্তি ঘটে তা জেনে নিতে হবে । তাই কান্ট তার বিচারমূলক জ্ঞানতত্ত্বে বলেছেন যে ,জ্ঞানের উৎস হিসাবে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি উভয়ই প্রয়ােজনীয় । ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা জ্ঞানের উপাদান এর যােগান দেয় এবং বুদ্ধি ঐসব উপাদানগুলিকে সংশ্লেষিত করে । যার ফলে আমরা জ্ঞানের বিষয় লাভ করি । বুদ্ধি বা মনের এরূপ সক্রিয় ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরােপ করে কান্টের মতবাদ দর্শনশাস্ত্রে কোপার্নিকাস বিপ্লব নামে খ্যাত । 

কান্ট জ্ঞানের দুইপ্রকার উপকরণকে স্বীকার করেছেন – সংবেদনরূপ উপাদান এবং ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বুদ্ধির আকার । কিন্তু উপাদানের উৎস হল বস্তুর স্বরূপ এবং আকারের উৎস হল মন । এই আকারগুলি কেন সঠিকরূপে উপাদানগুলির ওপর প্রয়ােগ করা যাবে সেই সম্পর্কে কোনাে যথাযথ উত্তর কান্টের মতবাদে পাওয়া যায় না , যেহেতু বস্তুতরূপে জগৎকে জানা যায় না তাই কান্টের বিচারবাদ অজ্ঞেয়বাদে পরিণতি লাভ করেছে , তাই কান্ট বলেছেন , অতীন্দ্রিয় সত্তাবিষয়ক অধিবিদ্যা সম্ভব নয় , আবার , বস্তুরূপে যদি অজ্ঞেয় হয় তবে বস্তুতরূপে ইন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করে সংবেদন উৎপাদন করছে – এই সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না । 


মূল্যায়ন : সুতরাং কান্টের বিচারবাদে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা উভয়ের একান্ত প্রয়ােজনীয়তা ও সহযোগিতা স্বীকৃত হলেও এই মতবাদ দোষমুক্ত নয় ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন