যন্ত্র ও জীবদেহের পার্থক্য কি গুণগত না পরিমাণগত যথার্থভাবে ব্যাখ্যা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর যন্ত্র ও জীবদেহের পার্থক্য কি গুণগত না পরিমাণগত যথার্থভাবে ব্যাখ্যা কর jontro o jibdeher parthokko ki gungoto na porimamgoto jotharthovabe bakkha koro


উত্তর : আইওনিয়ান মত : প্রাচীন আইওনিয়ান দার্শনিকদের মতে প্রাণ ও জড় স্বতন্ত্র গুণবিশিষ্ট হলেও জড়বস্তুতেই প্রাণ দেখতে পাওয়া যায় । অবশ্য এ মতবাদে প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হল তার ব্যাখ্যা নেই । এতে শুধু বলা হয়, প্রাণ জড়ের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত । 

লুক্রিটিয়াস ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক মত : দার্শনিক লুক্রিটিয়াস - এর মতে রাসায়নিক এবং যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফলেই জড় থেকে প্রাণের উদ্ভব । তিনি বললেন এক তাল মাটিকে উত্তপ্ত করে পরে সিক্ত করলে তা থেকে প্রাণের উদ্ভব । হয়নি, আপনা - আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভব হয়েছে ; এক হিসাবে লুক্রিটিয়াসকে তাদের পথ প্রদর্শক বলা যায় । 


জীবদেহ ও যন্ত্র : “ জীবদেহ ” বলতে আমরা বুঝি সেই বস্তুকে যা জৈবিক প্রক্রিয়ার আধার বিশেষ । এবং “যন্ত্র” হল তাই যা কোন বাহ্য শক্তির দ্বারা জড় অংশের সমবায়ে গঠিত , বাহ্যশক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কোন চেতন পুরুষের উদ্দেশ্যসাধন করে থাকে । 

ব্যবহারিকভাবে যন্ত্র ও জীবদেহের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও আছে । জড়বাদী ও যন্ত্রবাদী চিন্তাবিগণ মনে করেন যে , যন্ত্র ও জীবদেহের মধ্যে মূলগত পার্থক্য নেই এবং পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রের সাহায্যে জীবদেহকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । কিন্তু যন্ত্র ও জীবদেহের মধ্যে যে পার্থক্য তা শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগতও বটে । অর্থাৎ, উভয়ের মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য বর্তমান এখন তা আলােচনা করছি । 


প্রথমত । যন্ত্রের মধ্যে যে সংহতি এবং ঐক্য থাকে সেটি আসলে আসে বাইরে থেকে । মানুষই যন্ত্রের সৃষ্টিকর্তা । যেমন কোন কারিগর ঘড়ির বিভিন্ন অংশগুলিকে একত্র করে ঘড়ি তৈরি করে । কিন্তু জীবদেহের ঐক্য বাইরে থেকে আসে না , আসে জীবদেহের অন্তর থেকে । 

দ্বিতীয়ত । যন্ত্র কতকগুলি বিচ্ছিন্ন অংশের একটি কৃত্রিম সংগঠন , যেখানে সমগ্রকে অংশের উপর নির্ভর করতে হয় । সাধারণ যন্ত্রের একটি অংশ বিকল হয়ে পড়লে সমগ্র যন্ত্রই বিকল হয়ে যায় । জীবদেহ কতকগুলি অংশের স্বাভাবিক সংগঠন । কতকগুলি স্বতন্ত্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করলে জীবদেহ সৃষ্টি হয় না । জীবদেহের ক্ষেত্রে সমগ্র অংশের উপর এবং অংশকেও সমগ্রের ওপর নির্ভর করতে হয় । 

তৃতীয়ত । যন্ত্রের বেলায় অংশের প্রাধান্য বেশি । কিন্তু জীবদেহের বেলায় সমগ্রের প্রাধান্য বেশি এবং জীবদেহের সমগ্রতাই অংশগুলিকে সক্রিয় রাখে । 

চতুর্থত । যন্ত্র বাইরের শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । যন্ত্রের এমন ক্ষমতা নেই যার দ্বারা সে নিজে ক্রিয়া করতে পারে । মানুষ যন্ত্রকে পরিচালিত করে । জীবদেহ বাইরের কোন শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় না । জীবদেহের অভ্যন্তরস্থ শক্তিই জীবদেহকে চালিত করে । 


পঞ্চমত । যন্ত্রের কোন বৃদ্ধি নেই কিন্তু জীবদেহের বৃদ্ধি আছে । সামান্য একটি অঙ্কুর থেকে উৎপন্ন হয়ে পরে বিরাট মহীরুহে রূপান্তরিত হয় । 

ষষ্ঠত । যন্ত্রের কোন নিজস্ব উদ্দেশ্য নেই । যন্ত্র সর্বদা অপরের উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই নিয়ােজিত । কিন্তু জীবের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে এবং বিভিন্ন অঙ্গ -প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে জীব নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধন করে । 

সপ্তমত । জীবের আত্মসংরক্ষণ , আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিকাশের ক্ষমতা আছে যা যন্ত্রের নেই । উপরের আলােচ্য জীবদেহ ও যন্ত্রের পার্থক্য থেকে বুঝলাম , উভয়ের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য আছে এবং এই পার্থক্য শুধু পরিমাণগত পার্থক্যের কথাই ঘােষণা করে না , গুণগত পার্থক্যের কথাও বলতে চায় । সুতরাং , যন্ত্র ও জীবদেহের পার্থক্য শুধু পরিমাণগত নয় , গুণগতও বটে ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন