উত্তর : “বিবর্তন” বলতে যা অপ্রকাশিত ও প্রচ্ছন্নতার প্রকাশ ও প্রকট হওয়া বােঝায় । যা এখন অপ্রকাশিত রয়েছে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে ক্রমশ প্রকাশিত হওয়া বা ব্যক্ত হওয়াকেই বিবর্তন বলে ।
বিবর্তনকেন্দ্রিক মতবাদ : ডারউইনের মতবাদকে জৈব - বিবর্তনবাদ বলা হয় । ডারউইন তার “ Origin of Species ” এবং “ Descent of Man ” নামক দুটি গ্রন্থে জীবের বিবর্তন সম্বন্ধে তাঁর মতবাদ ব্যক্ত করেছেন ।
ডারউইন আর যা বললেন : ডারউইনের মতে প্রাণ থেকেই প্রাণের উৎপত্তি । অর্থাৎ জীবকোষ থেকেই জীবকোষের উৎপত্তি হয়েছে । অবশ্য তিনি একথাও বলেছেন যে , ঈশ্বর জড় জগতে প্রথম প্রাণ শক্তির সঞ্চার করেছেন এবং তাঁরই ইচ্ছায় প্রথমে সরল জীবকোষ আবির্ভূত হয় । সরল জীবকোষের অবশ্য তিনি যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন । সরল জীবকোষ থেকে বিভিন্ন জীবশ্রেণির আবির্ভাবের যে সব নিয়ম রয়েছে তা তিনি উল্লেখ করেছেন , যেমন –
( i ) জীবকোষের আত্মবিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি : পৃথিবীর বুকে যে প্রথম জীবকোষের আবির্ভাব হয়েছিল , সেই জীবকোষ নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করে দুটি জীবকোষের সৃষ্টি করেছিল ।
( ii ) আকস্মিক বা স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন : ডারউইন বলেন যে, প্রােটোপ্লাজম কোষ দেখতে সরল মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে বেশ জটিল বলেই প্রােটোপ্লাজম কোষের মধ্যে নানা পরিবর্তন ঘটে । প্রােটোপ্লাজম কোষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত বা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটলেই জীবদেহেও অনুরূপ পরিবর্তন ঘটে ।
( iii ) আকস্মিক পরিবর্তন বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয় : প্রােটোপ্লাজম কোষে যে সব আকস্মিক পরিবর্তন হয় তা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে তাদেরও জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করে ।
( iv ) প্রাকৃতিক নির্বাচন বা যােগ্যতমের বাঁচার অধিকার : জীব বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে , কিন্তু জীবের সংখ্যানুপাতে খাদ্যের পরিমাপ খুবই কম ।কাজেই খাদ্য নিয়ে জীবের মধ্যে প্রবল প্রতিযােগিতা দেখা যায় । ডারউইন এই প্রতিযােগিতাকে “ জীবনযুদ্ধ ” বলেছেন ।
( v ) আগে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, পরে কার্য : ডারউইন মনে করেন , আকস্মিকভাবেই জীবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আবির্ভাব ঘটে । অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উদ্ভবের পরে তারা বিভিন্ন কার্যের জন্য নির্দিষ্ট হয় ।
সমালােচনা : ( i ) যান্ত্রিক বিবর্তনের সাহায্যে জীবের এরকম অপূর্ব দেহ গঠনের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয় ।
( ii ) প্রােটোপ্লাজম কোষের মধ্যে আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে একটা নতুন জাতির প্রাণীর উদ্ভব কি করে হতে পারে তা বােধগম্য নয় ।
( iii ) একটা জাতির টিকে থাকার কারণ হিসাবে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলেছেন । কিন্তু অন্ধ প্রকৃতি কি করে এই নির্বাচন করে তা বােঝা যায় না ।
( iv ) “ জীবনযুদ্ধ ” নির্ভর করে বাঁচার আগ্রহের উপর । বাঁচবার আগ্রহ জীবের অন্তর থেকে আসে এবং এই আগ্রহই জীবকে বাঁচতে সাহায্য করে ।
মূল্যায়ন : সুতরাং , আমাদের মানতেই হয়, বিবর্তন প্রক্রিয়ার মুলে কোন চেতনা বা বৃদ্ধি বা উদ্দেশ্যের অস্তিত্ব আছে , যার দরুণ এক শ্রেণি থেকে ক্রমে ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে ।