উত্তর : দুঃখবাদ : যে মতবাদ বিশ্বাস করে জগৎ এবং জীবনের সর্বত্রই দুঃখ, আনন্দ বলে কিছু নেই , আদি , মধ্য এবং অন্ত সবই দুঃখময় তাই দুঃখবাদ ।
দুঃখবাদের অভিযােগ : ভারতীয় দর্শনের বিরুদ্ধের অভিযােগগুলির মধ্য দুঃখবাদ একটি । এরূপ অভিযােগের কারণ হল ভারতীয় সম্প্রদায়গুলিতে দুঃখ নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে । বৌদ্ধ দর্শনে বলা হয়েছে সবই দুঃখময় ( সর্বং দুঃখ ) । সাংখ্য দর্শনে আধিবৈদিক , আধিভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক নামে ত্রিবিধ দুঃখের কথা বলা হয়েছে । যােগ দর্শনে পরিণাম , তাপ এবং সংস্কার এই তিন প্রকার দুঃখের আলােচনা আছে । ন্যায় বৈশেষিক এবং মীমাংসা দর্শন অনুযায়ী অনাবিল আনন্দ বদ্ধ জীব কোনদিন পেতে পারে না । উপনিষদের ব্রহ্ম ছাড়া সবকিছুকে দুঃখময় বলা হয়েছে । গীতায় শ্রীকৃষ্ণ জগৎকে দুঃখের আলয় বলেছেন । তাই , পাশ্চাত্য দার্শনিকরা ভারতীয় দর্শনের বিরুদ্ধে এরূপ অভিযােগ করে থাকেন ।
দুঃখবাদের অভিযােগ খন্ডন : ভারতীয় দর্শনের আদিতে দুঃখ থাকলেও পরিণামে দুঃখ নিবৃত্তির মাধ্যমে চির আনন্দময় অবস্থার আশা জাগিয়েছেন । বস্তুত দুঃখের অনুভূতিই দুঃখ নিবৃত্তির পথ অনুসন্ধানে ব্রতী করে । বিভিন্ন দর্শনে দুঃখ নিবৃত্তির বিভিন্ন উপায় বা পথ নির্দেশ করে জীবকে সমস্ত প্রকার দুঃখের হাত থেকে মুক্তিলাভের মাধ্যমে মােক্ষলাভের কথা বলা হয়েছে ।
ন্যায় মতে , মিথ্যা জ্ঞানের নিবৃত্তি দ্বারা, বৈশেষিক দর্শনে তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা, বেদান্ত দর্শনে অবিদ্যার নিবৃত্তি দ্বারা, মীমাংসা দর্শনে ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা, বৌদ্ধ দর্শনে চারটি আর্যসত্য দ্বারা , জৈন দর্শনে সমাধি দ্বারা মােক্ষ লাভের কথা বলা হয়েছে । ফলে , ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়গুলিতে মূলত দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায়ের আলােচনা করতে গিয়েই দুঃখের আলােচনা করা হয়েছে ।
সিদ্ধান্ত : ভারতীয় দর্শন শুরুতে দুঃখবাদী হলেও পরিণামে আশাবাদী । “যেখানে সমস্ত ভারতীয় দর্শন দুঃখকে দূরীভূত করতে সক্ষম বলে ঘােষণা করে , সেখানে প্রকৃত দুঃখবাদ বলতে যা বােঝায় সেই অর্থে একে দুঃখবাদী বলা যায় না” —ম্যাক্সমুলার । ম্যাক্সমুলার আরও বলেন , “যেখানে সব ভারতীয় দর্শনের লক্ষ্য অজ্ঞানপ্রসূত দুঃখের নিবৃত্তি এবং সত্যজ্ঞান থেকে উদ্ভূত চরম শান্তি লাভ সেখানে ভারতীয় দর্শনকে দুঃখবাদী না বলে সুখবাদী বলা যায় ।” কাজেই , ভারতীয় দর্শনকে দুঃখবাদী না বলে আশাবাদী ও মুক্তিবাদের দর্শন বলা যায় ।