অস্তিত্বপ্রত্যক্ষ নির্ভর বিশ্লেষণ কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর অস্তিত্বপ্রত্যক্ষ নির্ভর বিশ্লেষণ কর astito protokkho nirvor bishleshon koro

উত্তর : ভাববাদী দর্শনের মূল বক্তব্য হল জ্ঞানের বিষয় মন বা চেতনার ওপর নির্ভরশীল । জ্ঞেয় বস্তুর মন নিরপেক্ষ কোন সত্তা নেই । বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল । ব্রিটিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে এইরুপ ভাববাদের প্রবক্তা । এটি ভাববাদের একটি বিশেষ রূপ — আত্মগত ভাববাদ । এই মতবাদ অনুসারে এই জগতে মন এবং মনের ধারণা একমাত্র সত্য । প্রতিরূপী বস্তুবাদের সূত্র ধরেই এই ভাববাদের উদ্ভব । এই মতবাদ অনুযায়ী জড় জগতের কোন স্বাধীন সত্তা নেই । বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার প্রত্যক্ষ নির্ভর । তাই বার্কলের ভাববাদের মূল কথা হল , অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর । অর্থাৎ বার্কলের মতে কোন কিছু আছে তখনই বলা যাবে , যখন কেউ না কেউ সেটিকে প্রত্যক্ষ করবে , কিংবা কোন না কোন মন সেটিকে প্রত্যক্ষ করবে । তাই বার্কলের মতে , মনের বাইরে বস্তুর কোন পৃথক অস্তিত্ব নেই । আমরা যেসব বস্তু প্রত্যক্ষ করি আসলে সেইসব বস্তুর কোন অস্তিত্ব নেই । তাপের অস্তিত্ব কেবলমাত্র জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল । তার মতে বস্তু বা বস্তু ধর্ম মনের ধারণা ছাড়া কিছুই নয় ।সুতরাং বার্কলের মতে , মনই একমাত্র অস্তিত্বশীল দ্রব্য তাই জড় বস্তুর অস্তিত্ব কোন না কোন মনের প্রত্যক্ষ নির্ভর । 

বার্কলে লকের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদকে অস্বীকার করে বলেন যে , জড় বস্তুহল গুণ সমূহের সমষ্টি এবং মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ হল আমাদের মনের ধারণা । বার্কলের মতে ধারণার সত্তা ছাড়াও একটি সত্তা আছে যা ধারণাকে প্রত্যক্ষ করে । এই প্রত্যক্ষ কর্তাকে বার্কলে আত্মা বা মন বলেছেন । তাই জ্ঞাতা হিসেবে মন বা আত্মার অস্তিত্ব তিনি স্বীকার করেছেন । 


এখন প্রশ্ন হল , অস্তিত্ব যদি ব্যক্তি নির্ভর হয় বা মন - নির্ভর হয় তাহলে অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা কি করে রক্ষা করা সম্ভব ? আমরা যখন ঘরে থাকি তখন আমাদের উক্ত ঘরে অবস্থিত টেবিলের সংবেদন হয় । এই সংবেদনের মাধ্যমে টেবিলটি আছে , এইরূপ জ্ঞান হয় । কিন্তু যখন আমরা ঘর থেকে বাইরে যাই তখন এই সংবেদন তাকে না । আবার ঘরে প্রবেশ করলে টেবিলের সংবেদন হয় । বার্কলে এই সমস্যা দূর করার জন্য বলেন যে — যখন আমাদের টেবিলের সংবেদন হয় না তখন ঈশ্বরের এই সংবেদন হয় । তাই তথাকথিত বস্তুজগৎ মানুষের কিংবা ঈশ্বরের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল । 
 
বার্কলের এই মতবাদের বিরুদ্ধে নানা আপত্তি ওঠে । যেমন মুর এবং রাসেলের মতে বার্কলে অনুভব ক্রিয়া এবং অনুভবের বিষয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যকে লক্ষ্য করেননি । বার্কলের ঈশ্বরকে আমাদের সমস্ত অভিজ্ঞতার জন্য দায়ী করেছেন । কিন্তু অভিজ্ঞতার বাইরে যেমন বাহ্য জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না, তেমনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব কেউ স্বীকার করতে পারে না । কেননা ঈশ্বর প্রত্যক্ষের বিষয় নন । অহংসর্বস্ববাদ এড়াবার জন্য সকলের ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকৃতি তার মূল মতবাদের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন । বার্কলে অভিজ্ঞতাবাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন ।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন