যােগ কী ? অখন্ড যােগ কী? অখন্ড যােগ নিয়ে অরবিন্দ কি বলেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর যােগ কী অখন্ড যােগ কী অখন্ড যােগ নিয়ে অরবিন্দ কি বলেছেন yog ki akhondo yog ki akhondo yog niye arobindo ki bolechen Questions answers

উত্তর : যােগ কী : ‘যােগ’ কথাটির অর্থ হল চিত্রবৃত্তি নিরােধ । ‘যুজ’ ধাতুর ‘ঘঙ’ প্রত্যয়যােগে ‘যােগ’  শব্দটি উৎপন্ন হয় । ‘যুজ’ ধাতুর আক্ষরিক অর্থ সংযােগ । অর্থাৎ যােগের দ্বারা জীবাত্মা ও পরমাত্মার সংযােগ ঘটে । কিন্তু অরবিন্দ যােগ বলতে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনকে বােঝাতে যাননি , কারণ তিনি মনে করতেন জীবাত্মা ও পরমাত্মা ভিন্ন নয় । জীব ব্রহ্মের প্রকাশ মাত্র । এই কারণেই অরবিন্দের যােগকে ‘অখন্ড যােগ’ বলা হয় । 


অখন্ড যােগ কী ? “ অখন্ড ” — অর্থাৎ যা খন্ড নয় । অরবিন্দের মতে এক , অদ্বয়, সচ্চিদানন্দ পরমব্রয়ই মূলতত্ত্ব । পরমব্রত্ম বহুরূপে প্রকাশিত । প্রতিটি মানুষের মধ্যেই তার প্রকাশ । যেমন কোনাে বীজের মধ্যে সমগ্র বৃক্ষটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে । প্রকৃতির কোলে , প্রকৃতির আঙিনায় ঘুমন্ত বীজটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে মহীরুহে পরিণত হয় । তেমনি যােগ সাধনার মাধ্যমে ঘুমন্ত বীজটি ধীরে ধীরে বিকশিত  হয়ে পরমাত্মার পূর্ণরূপ দান করে এবং অখন্ড যােগ তখনই বলা যাবে যখন ব্যক্তি এবং পরমাত্মা , পরমাত্মা এবং ব্যক্তি মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে । অর্থাৎ উদাহরণ হিসাবে মহাপ্রভুর গৌরাঙ্গ মূর্তির কথা বলা যেতে পারে । যেখানে রাধা এবং কৃষ্ণ, কৃষ্ণ এবং রাধা যুগল মূর্তি একসঙ্গে প্রকাশিত ।  

মানসােত্তর চেতনা : ব্রত্মের চেতনা আমাদের মনের নাগালের বাইরে , সেজন্য এমন চেতনাকে ‘ ‘মানসােত্তর চেতনা’ বলা হয় । মনের থেকে উন্নততর তত্ত্ব যে অতিমন আমাদের মধ্যে নিহিত ও সুপ্ত রয়েছে তাকে জাগ্রত করতে পারলেই কেবল আমরা মানসােত্তর চেতনায় পৌঁছাতে পারি । রবীন্দ্রনাথের ভাষায় –


    “তােমার মাঝে আমার প্রকাশ তাই এত মধুর ।”  


তিনটি স্তর : ঈশ্বরােপলব্ধির জন্য অধ্যাত্মবাদীরা বুদ্ধি, আবেগ , ইচ্ছা ইত্যাদি বিভিন্ন মানসবৃত্তির চর্চা এবং প্রসার ঘটাতে চেয়েছেন । ‘ব্যক্তিসত্তা সীমিত দেহ , প্রাণ এবং মনের সঙ্গে অভিন্ন ।’ এরকম ভ্রান্ত ধারণাকে বৌদ্ধিক পথে দূর করার চেষ্টা হয়েছে । একথা জানানাের চেষ্টা করা হয়েছে যে ঈশ্বরের সেই পরম প্রকৃত সত্তা যা প্রতিটি ব্যক্তির অস্তিত্বে লীন হয়ে আছে । যদিও আধ্যাত্মিক উপলদ্ধির জন্য উপরিউক্ত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মানসবৃত্তির চর্চা আবশ্যিক তবু মানুষ যে সর্বোত্তম লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম সেখানে পৌঁছানাের পক্ষে এরকম চর্চা যথেষ্ট নয় । কেননা , অরবিন্দ দেখান যে উপরিউক্ত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বদলে মূলত ব্যক্তি সাধকের সঙ্গেই সম্পৃক্ত । 


কঠিন সাধনা : যােগ এক কঠিন সাধনা , এক কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থূল মনকে ক্রমশঃ উন্নত করে পূর্বোক্ত অতিমানস স্তরে ব্যক্তির পক্ষে পৌঁছানাে সম্ভব — ( ১ ) প্রথমে স্থূল মনকে সেই উন্নততর মনে উন্নীত করতে হবে যে মন সবসময়েই প্রবলভাবে সত্যের ধারণা । সচ্চিদানন্দ ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা করে এবং এই চিন্তার মাধ্যমে ইচ্ছা , আবেগ , প্রাণ, দেহ ইত্যাদিকে বিশুদ্ধ এবং গতিশীল করে । ( ২ )এই মনকে এবার সেই আলােকিত মনে উন্নীত করতে হবে যে মন পরমসত্তার অন্তর্নিহিত আলােক গ্রহণ করে এবং সেইসঙ্গে নিম্নতর জৈবিক এবং দৈহিক উপাদানসমূহকে আরাে রূপান্তরিত করে । ( ৩ )এই উন্নীত মনকে এবার সেই স্বজ্ঞায় উপনীত করতে হবে যে স্বজ্ঞা তাদত্মবােধের মাধ্যমে পরমসত্তার প্রত্যক্ষ জ্ঞান প্রকাশে সক্ষম ।


শেষ কথা : ঋষি অরবিন্দের অখণ্ডযােগের ভাবনা আধ্যাত্মিক ভারতীয় দর্শনের ভাবনায় এক অভিনব সংযােজন যেখানে বিশ্বকে ঐক্যভূত করার কথা বলা হয়েছে । সেইজন্য অখণ্ডযােগ আজও নিজের ভাবমূর্তিতে বিরাজমান । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন