যােগ দর্শনে ‘যােগ ’ শব্দের অর্থ কি ? যােগের অষ্ট অঙ্গ বা আটটি পথ ব্যাখ্যা করো ।

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy যােগ দর্শনে যােগ শব্দের অর্থ কি যােগের অষ্ট অঙ্গ বা আটটি পথ ব্যাখ্যা করো yog dorshone yog sobder artho ki yoger ashto ango ba attir poth bakkha koro questions answers


উত্তরঃ যােগসূত্রে ‘যােগ ’ শব্দে অর্থ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে , ‘যােগঃ চিত্তবৃত্তি নিরােধঃ’ — অর্থাৎ চিত্তবৃত্তির নিরােধই যােগ । সাধারণতঃ ‘যােগ ’ শব্দটি যুক্ত করা বা সংযােগ অর্থেই ব্যবহৃত হয় । অনেকের মতে , যােগ বলতে বােঝায় জীবাত্মার সাথে পরমাত্মা বা ঈশ্বরের সংযােগকে । কিন্তু যােগ সূত্রে যােগ বলতে সমাধিকেই বােঝায় । 

যােগদর্শনের যােগের ক্ষেত্রে আটটি অঙ্গ বা পথের কথা বলা হয়েছে । এজন্য , এই আটটি অঙ্গকে একত্রে অষ্টাঙ্গ যােগও বলা হয় । আসলে এই আটটি হল যােগের আটটি স্তর । এই আটটির কোন একটি দ্বারাই সাধনা সম্ভব নয় । এজন্য এই আটটিকে সাধনার আটটি অঙ্গ বলা হয়েছে । এই অঙ্গ আটটি পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়, একই সাধনার বিভিন্ন স্তর । যােগ দর্শন অনুসারে এই অষ্টাঙ্গ যােগ দ্বারা সাধনার মাধ্যমে জীবাত্মার আত্মােপলব্ধি ঘটে । যােগের এই আটটি অঙ্গ হল— ( ১ ) যম , ( ২ ) নিয়ম , (৩ ) আসন ( ৪) প্রাণায়াম, ( ৫ ) প্রত্যাহার , (৬ ) ধারণা ( ৭ ) ধ্যান এবং (৮ ) সমাধি । 

১ ) যম : অষ্টাঙ্গ যােগের প্রথম অঙ্গ হল যম । যােগদর্শনে অহিংসা , অস্তেয়, সত্য , ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ এই পাঁচটিকে যম বলা হয়েছে । অহিংসার অর্থ কায়মনােবাক্যের দ্বারা কাউকে আঘাত না করা । অহিংসা আবার তিন প্রকার কায়িক বা শারীরিক , বাচিক এবং মানসিক । শারীরিক বা কায়িক অহিংসা হল শারীরিক ভাবে কাউকে আঘাত না করা , কাউকে অহিংসার অর্থ বাক্যের দ্বারা কাউকে আঘাত না করা আর মানসিক অহিংসা হল মানসিক ভাবে কাউকে হিংসা না করা । সত্য অর্থাৎ মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকা , অস্তেয় অর্থাৎ চৌর্যবৃত্তি থেকে বিরত থাকা , অপরের দ্রব্য গ্রহণ না করা , ব্রহ্মচর্য অর্থাৎ কাম সংক্রান্ত কর্ম বা চিন্তা থেকে বিরত থাকা । এবং অপরিগ্রহ অর্থাৎ প্রয়ােজনাতিরিক্ত কোন বিষয় গ্রহণ না করা । 


২ ) নিয়ম : শৌচ , সন্তোষ , তপস্যা , স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বর প্রাণিধান এই পাঁচটিকে যােগদর্শনে নিয়ম বলা হয়েছে । শৌচ অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন ও পবিত্র হওয়া । শৌচ দু’প্রকার বাহ্য ও অন্তর । স্ননাদি দ্বারা বাহ্য শৌচ এবং সৎচিন্তা , মৈত্রী , ইত্যাদি দ্বারা অন্তর শৌচ হয় । সন্তোষ অর্থাৎ সন্তুষ্ট হওয়া অল্পে তুষ্ট হওয়াই সন্তোষ । তপস্যা হল শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী ব্ৰতাচার অনুশীলন করা । স্বাধ্যায় অর্থাৎ শাস্ত্র যেমন বেদ , বেদান্ত, বেদাঙ্গ ইত্যাদির অধ্যায়ন । ঈশ্বর প্রণিধান বলতে ঈশ্বর চিন্তা বা ঈশ্বরে আত্মসমর্পণকে বােঝায় । 

৩ ) আসন : দেহ ও মনকে সুস্থ রাখা ও মনকে স্থির করে সাধনার উপযােগী করার জন্য যে অঙ্গভঙ্গী তাই আসন । অন্যভাবে বলা যায় , যে ভাবে শরীরকে রাখলে শরীরকে স্থির ও ক্লেশমুক্ত রাখা যায় তাই আসন । আসন বহু রকমের হতে পারে । যেমন— বিরাসন , পদ্মাসন , শীর্ষাসন , ভূজঙ্গাসন , বজ্ৰাসন , ইত্যাদি ।



৪ ) প্রাণায়াম : প্রাণায়াম শ্বাস প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করা । প্রাণায়াম তিন প্রকার রেচক , পূরক ও কুম্ভক । রেচক হল শ্বাস ত্যাগ করে স্থিত হওয়া । পূরক অর্থাৎ শ্বাস গ্রহণ করে স্থিত হওয়া এবং কুম্ভক হল শ্বাস ত্যাগ না করে দীর্ঘসময় শ্বাসকে ভিতরে ধরে রাখা । 

৫ ) প্রত্যাহার : ইন্দ্রিয়গুলিকে বাহ্য বিষয় থেকে সরিয়ে এনে অন্তর্মুখী করার নামই প্রত্যাহার । রূপ , রস , গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দের প্রতি যে স্বাভাবিক আকর্ষণ তা থেকে মনকে সরিয়ে এনে অন্তরের দিকে নিয়ে আনাই প্রত্যাহার । 

৬ ) ধারণা : চিত্ত সংযােগ করাই ধারণা । অভিপ্রেত কোন বস্তুর সাথে দীর্ঘ সময় মনােসংযােগ করাই ধারণা । ধারণার মাধ্যমে চিত্ত বা মনকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে স্থির রাখা সম্ভব হয় । 

৭ ) ধ্যান : যে বিষয়ে চিত্ত নিবৃত্ত হয় সেই বিষয়ের নিরবচ্ছিন্ন ধারণা বা ভাবনাই ধ্যান । আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির ক্ষেত্রে ধ্যান আবশ্যক । 


৮ ) সমাধি : ধ্যানের পরিণাম হল সমাধি । সমাধিস্থ অবস্থায় যােগী নিজের সম্পর্কে, জগৎ সম্পর্কে এমন কি ধ্যান সম্পর্কেও কোন জ্ঞান থাকে না । চিত্তবৃত্তির নিরাধের জন্যই এই সমাধি ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন