উত্তর : স্ব + রাজ = স্বরাজ । এক্ষেত্রে ‘স্ব’ শব্দের অর্থ নিজের , আর ‘রাজ’ শব্দটির অর্থ রাজত্ব । কাজেই স্বরাজের আক্ষরিক অর্থ দাঁড়াচ্ছে নিজের রাজত্ব । তবে নিজের বলতে এখানে দেশীয় জনগণকে বােঝায় । সাধারণ অর্থে স্বরাজ হল দেশীয় শাসন । স্বরাজ শব্দটির অর্থ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে গেলে বিদেশী রাজ শব্দটির সঙ্গে পার্থক্য বােঝা প্রয়ােজন । কারণ প্রকৃত স্বরাজের অর্থ হল বিদেশী রাজের অত্যাচার উৎপীড়ন ও অপমান এবং বিদেশী রাজের শােষণ থেকে মুক্ত হওয়া । তবে শুধুমাত্র বিদেশী শােষণ থেকে মুক্তি লাভই স্বরাজ নয় । স্বরাজ আরও অন্য কিছু । স্বরাজ হল আত্মার বিকাশ বা উপলব্ধি । প্রকৃত স্বরাজ মানুষের ব্যক্তিগত , পারিবারিক , সামাজিক এমনকি সামাজিক স্ববিধ সুখ সমৃদ্ধির কারণ ।
অ + হিংসা = অহিংসা । অর্থাৎ অর্থাৎ “ অহিংসা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল কারও কোনও ক্ষতি বা হিংসা না করা । অহিংসা মানে জীবে প্রেম, আত্মত্যাগ , সহনশীলতা প্রভৃতি সৎগুণের অনুশীলন করা । অহিংসা শব্দটি গান্ধীজির আগে ছান্দোগ্য উপনিষদে পরিলক্ষিত হয় । এখানে সততা এবং সত্যতা । এই সব কারণেই গান্ধীজি অহিংসার দ্বারা দারুনভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন । তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে , সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে এই নীতিটিকে প্রয়ােগ করতে চেয়েছিলেন ।
অহিংসার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ : অ + হিংসা = অহিংসা । ‘ অ’ শব্দের অর্থ হল ‘ না’ আর হিংসা শব্দের অর্থ হল দ্বেষ বা আঘাত । অহিংসার দ্বারা প্রভাবিত মানুষ সত্যের পূজারি হয়ে ওঠেন । তাই গান্ধীজি অহিংসাকে একটি নীতি নয়, একটি পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করেছেন । এখন স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে অহিংসার ভূমিকা নিয়ে আলােচনা করছি ।
অহিংসা জীবনমুখী অস্ত্র : আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি স্বরাজ হল পূর্ণ স্বাধীনতা । ইংরেজ এদেশে বাণিজ্য করতে এসে হরণ করেছে ভারতমাতা তথা ভারতবাসীর স্বাধীনতা । এক শােষক শ্ৰেণী বা দংশনকারী কীট বিনা প্রতিরােধে তাদের আক্রমণস্থল ত্যাগ করবে একথা শুভ চেতনায় বাধে । একদিকে যখন ভারতবর্ষ চরমপন্থী আন্দোলনে আন্দোলিত , ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন , বিনয় বাদল দীনেশ , রাজবিহারীরা যখন মারের বদলে মার বা সশস্ত্র বিপ্লব করে ইংরেজদের দেশ থেকে তাড়াতে চাইছেন , তখন গান্ধীজি সেখানে অহিংসার কথা ঘােষণা করেছেন । গান্ধীজি ঘােষণা করেন প্রকৃত স্বরাজ অহিংসার পথেই সম্ভব । এটি কোন স্বপ্নিল কথা নয় । স্বরাজ কেউ তুলে দেবে না ,স্বরাজ অর্জন করতে হবে । স্বরাজ একটি চলমান শক্তি ।
এখন প্রশ্ন : ‘India today’ গ্রন্থে রজনী পাল দত্ত বােঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন গান্ধীজির পথে স্বরাজ আসাই উচিত ছিল , তাড়াহুড়ােয় স্বাধীনতা নামক সমক্ত দুধটুকু ধনতন্ত্রের শােষক বিড়াল চেটেপুটে খেয়ে নেয় । গান্ধীজি নিজে ভুল বুঝে নতুন করে অহিংসার জীবনমুখী অস্ত্র দিয়ে ভারতবর্ষকে গড়ে তােলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তখনই গান্ধীজিকে খুন হতে হয় । অর্থাৎ এই আলােচনা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি গান্ধীজির পথে অহিংসার পথে Passive Resistance প্রয়ােগ করে , স্বরাজ লাভ সম্ভব ।