উত্তর : এই উক্তিটির সত্যাসত্য বিচারের জন্য আমাদের আগে স্বরাজের ধারণা তৈরি করতে হবে । স্ব + রাজ = স্বরাজ । “ স্ব” মানে নিজের আর “রাজ ” মানে রাজত্ব । নিজস্ব শাসনের অন্য নামই স্বরাজ । স্বরাজ মানে পূর্ণ স্বাধীনতা । গান্ধীজি যে প্রগতিশীল আদর্শ সমাজের কল্পনা করেছিলেন , তাকেই তিনি “ স্বরাজ” নামে অভিহিত করেছেন । ব্যক্তিগত, সংস্কৃতিগত , সামাজিক সমস্ত রকম দাসত্ব থেকে মুক্তিই হচ্ছে — স্বাধীনতা ! স্বায়ত্তশাসন বা বৃটিশ শক্তির হাত থেকে মুক্তি বােঝায় না । বিদেশী শাসন মুক্ত হবার পরেও দেশে যদি স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আমরা স্বরাজ লাভ করেছি এ কথা বলা যাবে না । অর্থাৎ গান্ধীজি স্বরাজ বলতে বুঝিয়েছেন ব্যক্তি জীবনে , সমাজ জীবনে , রাজনৈতিক জীবনে পূর্ণ স্বাধীনতা ।
গান্ধীজি তাই আমাদের জানালেন সত্যাগ্রহ যেখানে পরিচালিকা শক্তি, যথার্থ স্বরাজ কেবল সেখানেই সম্ভব ” । সত্যাগ্রহের পথে হেঁটে স্বরাজ লাভ করতে হবে । তাঁর উপলদ্ধি ছিল হিংসার পথে বা অস্ত্রের সাহায্য নিয়ে ইংরেজকে এদেশ থেকে তাড়ানাে সম্ভব নয় । তাই তিনি ‘সত্যাগ্রহ’ নামক অস্ত্রটি ব্যবহার করলেন । সত্যাগ্রহ নামক তলােয়ারটির দু’দিকেই ধার । সত্যাগ্রহের অস্ত্র যে ব্যবহার করে এবং যার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় সত্যাগ্রহ উভয়কেই আর্শিবাদ করে । সত্যাগ্রহ একটি সংশােধনমূলক প্রক্রিয়া । যে প্রক্রিয়াটি ঘােষণা করে অর্থের বশবর্তী না হওয়া , বিজেতার কাছে আত্মসমর্পণ না করা , বিবেক দ্বারা পরিচালিত হওয়া , বিবেক বিরােধী কাজ না করা এ সবই সত্যাগ্রহের প্রক্রিয়া । সত্যাগ্রহ চিত্তকে সবল করে ভয়শূন্য করে । দুর্বল চিত্ত কখনও সত্যাগ্রহী হতে পারে না । কারণ দুর্বলতা এবং ভিরুতা পাপ । প্রকৃত সত্যাগ্রহী সত্য অহিংসার পূজারী । জনগণ যখনই সত্যাগ্রহের মন্ত্রে দীক্ষিত হবে , স্বরাজ তখন প্রতিষ্ঠিত হবে । সত্যাগ্রহ এমন এক শক্তি যার মাধ্যমে আমাদের বিবেক জাগ্রত হয় । সিংহের সামনেও আমরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারি । সত্যাগ্রাহী দেখে শত্রুর মুখ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং এরূপ সত্যাগ্রহী পারে প্রকৃত স্বরাজ আনতে ।