রাধাকৃষ্ণাণ বৌদ্ধিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে কি বলেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর রাধাকৃষ্ণাণ বৌদ্ধিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে কি বলেছেন radhakrishnan bouddhik abhigota bishoye ki bolechen questions answers

উত্তর : ভূমিকা : ‘অ্যান আইডিয়ালিস্টিক ভিউ অফ লাইফ ’গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন — উপলদ্ধি , ধ্যান এবং অন্তদৃষ্টি হল দর্শন । যতক্ষণ না জগৎ , জীবন ও বস্তু সম্পর্কে এমন পূর্ণ জ্ঞানলাভ হয় , যার  সাহায্যে তিনি তার অভিজ্ঞতাকে কোনাে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যেরই বিকাশরূপে ব্যাখ্যা করতে পারেন , ততক্ষণ দার্শনিকের অবসর নেই । এটি অত্যন্ত মূল্যবান কথা । দার্শনিক জীবনের শেষ চেতন প্রহর পর্যন্ত অধ্যাত্ম চেতনা এবং ব্যবহারিক চেতনার সংমিশ্রণের জন্য আত্মনিবেদিত থাকবেন । রাধাকৃষ্ণানের ভাষায় “আমরা যে জগতের মানুষ , সেই জগতকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টাই হল দর্শন । আর এই ব্যাখ্যার সঙ্গে নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতাকে একীভূত করতে হবে , অর্থাৎ আমরা আত্মার সাহায্যে আত্মাকে জানব ।”

অজেয় মানবাত্মা : আমরা তাদের জীবনের মধ্যেই দেখতে পাই যে তারা কেমন করে অজেয় মানবাত্মা হয়ে রয়েছে । তারা সকলে নিজেদের পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবসময়ই সংগ্রাম করেই চলেছে । আর এই সংগ্রামে যতই কঠিন আঘাত তাদের সামনে এসে উপস্থিত হােক না কেন , তারা নিজেদের জীবনীশক্তি দিয়ে সমস্ত আঘাতকে কাটিয়ে উঠতে পারবে । কোনােদিন কোনাে কিছুর কাছে তাদের মানবাত্মা পরাজয় স্বীকার করে না । সমাজের নিচুতলার মানুষ যারা প্রতিদিন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন , তাদের সকলকে রাধাকৃষ্ণাণ অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন । তিনি তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন যে— “আমাদের সমস্ত প্রকারের শক্তি লুকিয়ে থাকে আত্মার মাঝখানে । আমাদেরকে সেই শক্তিটাকে আত্মস্থ করে নিতে হবে । আমাদের দেহের প্রতিটি কোষ থেকে কোষের মধ্যে সেই বার্তা আমাদের পাঠিয়ে দিতে হবে । আর তাহলেই আমরা একটা নতুন বােধে জেগে উঠতে পারব ।” 



উপনিষদ : আর এই প্রসঙ্গ আলােচনা করতে গিয়ে তিনি প্রায়ই টেনে আনতেন উপনিষদের প্রসঙ্গ । বিশেষ করে তিনি ঋষি যাজ্ঞবন্ধ্যের কথা বলতেন । একদিন এই যাজ্ঞবল্ক্য রাজা জনকের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে চৈতন্যের স্বরূপ বলতে কি বােঝায় ?এই বিষয়টা লিপিবদ্ধ করা আছে বৃহদারণ্যক উপনিষদে । এখানে বলা আছে একবার রাজা জনক ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন যে — কোন জ্যোতি মানুষের ক্রিয়াকর্মেসাহায্যে করে ।” 

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যাজ্ঞবল্ক্য রাজাকে বলেছিলেন— “সূর্যেরজ্যোতি ,চন্দ্রের জ্যোতি , অগ্নির জ্যোতি, শব্দের জ্যোতি ইত্যাদি মানুষের আসা -যাওয়া এবং অন্যান্য কাজকর্মে সাহায্য করে ।”



শেষ বিচার : শেষ বিচার বলতে কি বােঝায় ? সত্যি সত্যি কোনােদিন মানবাত্মার পুনরুত্থান সম্ভব ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাধাকৃষ্ণাণ আমাদের বলেছিলেন যে ,“এই পুনরুত্থানের মানে কবর বা মরে যাওয়া মানুষের উত্থান নয় । এই উত্থানের অর্থ হল মানুষের আত্মমগ্নতা থেকে নিঃস্বার্থ প্রেম বা ভালােবাসার একটা জ্যোর্তিময় জগতে পৌঁছে যাওয়া , কোনাে স্বার্থমগ্ন ব্যক্তির নিজের গণ্ডি পেরিয়ে একটা মৃত্যুহীন আধাত্ম জীবনের পথে পা রাখা । আবার অনিত্য এই জগতের দাসত্বের শিকল থেকে মুক্তিলাভ করে আমাদের অনন্ত মূর্ত একটি জীবনের পথে চলতে হবে — এটাই হল প্রকৃত পুনরুত্থান বা রেজারেকশন ।” তাহলে আমরা আমাদের জীবনের সঠিকভাবে কোন রূপটাকে কামনা করব ? আমাদের অন্তরের আত্মা কেমনভাবে আকুতি জানাতে পারবে । এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাধাকৃষ্ণাণ বলেছিলেন যে— “ প্রত্যেকটা ধর্মপ্রাণ মানুষই তার জীবনে সুখ চায় । সে দুঃখ দুর্দশা থেকে সারাজীবনের মতাে পরিত্রাণ পেতে চায় । এমনকি সে পরের জন্মেও অনন্ত সুখ লাভ করতে চায় । কিন্তু আমরা উপনিষদে দেখতে পাই , সেখানে বলা আছে — আমাদের সকলের কি চাওয়া উচিত ? সেখানে বলা হয়েছে , আমাকে অন্ধকার থেকে আলােতে নিয়ে যাও । অসত্য থেকে সত্যে নিয়ে যাও । আর মৃত্যুথেকে অমৃতে নিয়ে যাও । ”




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন