মানুষের প্রকৃতি বিষয়ে রাধাকৃষ্ণাণ কি বলেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর মানুষের প্রকৃতি বিষয়ে রাধাকৃষ্ণাণ কি বলেছেন manusher prokriti bishoye radhakrishnan ki bolechen questions answers

উত্তর : ভূমিকা — দার্শনিক রাধাকৃষ্ণাণ সম্পর্কে আলােচনা করতে হলে প্রথমেই একটি বিতর্কিত বিষয়ের ওপর আলােকপাত করা দরকার । তা হল রাধাকৃষ্ণাণ কি নিজে কোনাে একটি দার্শনিক মতবাদের জন্মদাতা ছিলেন ? নাকি বিভিন্ন দর্শন মতবাদকে বিশ্লেষণ করে কোনাে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবার চেষ্টা করেছিলেন ? একথা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র উপায় নেই যে, রাধাকৃষ্ণাণ সেই অর্থে নতুন কোনাে দার্শনিক অভীক্ষার জন্ম দেননি । তবে দর্শনশাস্ত্রের ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্বের কথাটিও উল্লেখ করা উচিত । তিনি বহু পরিশ্রম করে প্রাচ্য এবং প্রতীচ্য দর্শনের বিভিন্ন দিকগুলিকে আত্মস্থ করেছিলেন । কৈশাের বয়স থেকেই তিনি ছিলেন এক স্থিতধী পাঠক । যৌবনে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে দর্শনশাস্ত্রের দুরূহ বিষয়গুলি পাঠ করতে থাকেন ? পরিশেষে তিনি এমন একটি দার্শনিক অভিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছিলেন যা বিশ্বের বিভিন্ন মানুষকে আশ্চর্য করে দিয়েছিল । 

রাধাকৃষ্ণাণের দর্শন চিন্তার মধ্যে কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে । তিনি প্রথমে সেই সরল সত্যটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন , তা হল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে দার্শনিক অভিজ্ঞানের সংযুক্তিকরণ করতে হবে । না হলে দর্শনশাস্ত্রের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আর থাকবে না । 


উত্তোরণ : আমাদের মনে অনেক সময়েই অনেক প্রশ্ন আসে । জীবনে কেন মানুষ হতাশ হয়ে যায় ? আমরা আসলে দুঃখবাদ বলতে কি বুঝি ? কেনই বা আমরা মাঝে মাঝে নিরাশার আক্রমণে ভেঙে পড়ি । রাধাকৃষ্ণাণ তাঁর গভীর মনস্তাত্ত্বি কমন দিয়ে এই সমস্ত আপাত সহজ অথচ জটিল ব্যাপারগুলােরও বিশ্লেষণ করেছেন । আর সেই ব্যাপারে আমাদেরকে বােঝাবার জন্য তিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজবিজ্ঞান , রাজনীতি ইত্যাদি জায়গা থেকে উদাহরণ এনে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন । তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন — “বিফলতা জীবনে আসবেই । আমাদের উচিত তাকে হাসিমুখে মেনে নেওয়া । আর এই বিফলতাই মানুষকে তার জীবনে আরাে অনেক বেশি অভিজ্ঞ করে তােলে ।” 

উদাহরণ : এই সমস্ত ধর্মীয় অবতারের উদাহরণ তিনি বারবার দিয়েছেন । গীতার বাণীর উপরে তার অসম্ভব একটা বিশ্বাস ছিল । এমনকি তিনি মাঝে মাঝে উচ্চারণ করতেন গীতার বেশ কিছু নির্বাচিত বাণী । এ ব্যাপারে তিনি জানিয়েছিলেন যে ,“কোনাে দুঃখীর মন যখন বিষাদে ভরে যায়, তখন আমাদের সকলের উচিত তার সেই বিষাদের ভাবটাকে হালকা করে দেওয়া । যদি কোনাে মানুষ নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের কোনাে কিছু যায় আসে না । কিন্তু যদি সেই নিঃসঙ্গ মানুষটি গভীর নিঃসঙ্গতার সময়ে কোনাে শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসার সুযােগ পায় আর যদি সেই সুযােগে সে তার নিঃসঙ্গতাকে দূর করতে পারে , তাহলে সেই সময়টার জন্য সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ।” 


শেষ কথা : আমরা জানি গীতায় বর্ণিত আছে যে— “আমি রাজ্য চাই না , পুনর্জন্ম বা স্বর্গসুখ চাই না । আমি শুধু চাই দুঃখতাপে ব্যথিত চিত্তে কিছুটা সান্ত্বনা দান করতে । ” রাধাকৃষ্ণাণ বলেছিলেন যে , “ এই কথাটা অত্যন্ত সত্যি যে আজকের দিনে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি হবার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবন আগের থেকে অনেক বেশি আরামদায়ক হয়ে উঠেছে । এখন আর আমাদেরকে আগেকার মতাে কায়িক পরিশ্রম করতে হয় না । কিন্তু তাই বলে কি আমরা সত্যি সত্যি দুঃখকে জয় করতে পেরেছি । আমরা কি আজও সমাজের শােষিত নিপীড়িত মানুষের অসহায় কান্না শুনি । আজও কি হতাশা আমাদের গ্রাস করে না ? 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন