মহম্মদ ইকবাল ঈশ্বর প্রসঙ্গে কি বলেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর মহম্মদ ইকবাল ঈশ্বর প্রসঙ্গে কি বলেছেন mohmmad ikbal eshwar prosonge ki bolechen questions answers


ভূমিকা : ইবাল মনে করতেন পৃথিবীর সব ধর্ম ঈশ্বরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় । ঈশ্বর একটি জটিল ফাঁদ । ইকবাল যেহেতু ইসলাম ধর্মালম্বী ছিলেন , তাই ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই ঈশ্বর বা আল্লার ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন । ইসলাম ধর্ম একাত্ববাদে বিশ্বাসী, ইকবালও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না । ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে বিভিন্ন দার্শনিকের মতবাদকে তিনি প্রমাণিত সত্য বলে মনে করতে চাননি । তিনি মনে করতেন স্বজ্ঞার সাহায্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব । তিনি ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণেই নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি দেখিয়েছিলেন — 


জগতের প্রতিপালক : ইকবাল মনে করতেন ঈশ্বর জগতের প্রতিপালক ও পরিচালক । সৃষ্টির ইতিহাসে বিশ্ব জগতের বিবর্তন সত্য এবং মনে রাখতে হবে এই বিবর্তন সর্বদাই উদ্দেশ্যমূলক । এবং এই বিবর্তন প্রক্রিয়া ঈশ্বর নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয় । 


সর্বশক্তিমান : সব ধর্মেই ঈশ্বর সর্বশক্তিমান বলে পরিগণিত হয় , ইকবালও সেই পথে হেঁটেছেন ।  ঈশ্বর সর্বশক্তিমান কারণ তিনি এই বিশ্বজগত এবং মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা ঈশ্বর সর্বজ্ঞ , সচ্চিদানন্দ , অহংস্বরূপ । ইকবাল বলেন এই বিশ্ব যেহেতু ঈশ্বরের প্রকাশ তাই ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয় না । ঈশ্বর সজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধ হন ।ঈশ্বর জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর জড়পরমাণুগুলির সাহায্যে নিমিত্তকর্তা হিসাবে এই জগতের সৃষ্টি করেননি । ঈশ্বর নিজের মধ্যেই নিহিত আছেন । তিনি অনন্ত , তিনি জগৎ সৃষ্টি করেন জগতের মধ্যে বিকশিত হন । ইকবাল মনে করতেন স্বজ্ঞাজাত অন্তর সৃষ্টির দ্বারা এই জগতের অস্তিত্বকে জানা যায় । তিনি মনে করতেন সকল কাজে আমিত্ব ছাড়া আরেকটি শক্তি যেন সর্বদা বাধা দিচ্ছে । এই বাধাদানকারী শক্তির দ্বারা এই বাহ্য জগতে অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় । 


পুরুষ : বৈশেষিক দর্শনের আত্মাকে যেমন পুরুষ বলা হয় , ইকবাল তেমনি ঈশ্বরকে পুরুষ বলেছেন । ঈশ্বর জগৎ ও জীবের সৃষ্টিকর্তা , ঈশ্বর জ্ঞানী, সর্বজ্ঞ এবং আনন্দস্বরূপ । প্রত্যক্ষ জ্ঞানের দ্বারা ঈশ্বরকে জানা যায় না । আবার যেহেতু ঈশ্বরের বাইরে কিছু নেই তাই ঈশ্বরের জ্ঞান প্রত্যক্ষ জ্ঞান নয় । সমস্ত কিছু ঈশ্বর স্বজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধি করেন । ইকবাল মনে করতেন ঈশ্বর জগতের অন্তর্বর্তী সত্ত্বা ঈশ্বরের অসংখ্য সৃজনশীল সত্ত্বার মধ্যে মাত্র একটি জগতে বিকশিত হয়েছে । জগত ঈশ্বরের অভিব্যক্তি ,তাই ঈশ্বর জগতের অন্তর্বর্তী সত্ত্বা । ইকবাল মনে করতেন ঈশ্বর যদি জগতের বহিমুখী হতেন তবে জগতের লক্ষ্য হত বাহ্যিক । তাই ঈশ্বর জগতের অন্তর্বর্তী সত্ত্বা । এর দ্বারা ইকবাল প্রমাণ করলেন এই জগৎ হল ঐশ্বরিক আন্ত সম্ভবনার একটি প্রকাশমাত্র । আবার ঈশ্বর নিজেকে জগতের মধ্যে বিলীন করে দেন না । সেই কারণে ঈশ্বরের দ্বারা অসংখ্য জগৎ সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যায় । তাই ঈশ্বরের উপস্থিতি এই জগতে এবং জগতের বাইরেও প্রবহমান । 



সৃজনশীলতা : ইকবাল বলেন ঈশ্বর সর্বোচ্চ অহম ।আর আমরা জানি সর্বোচ্চ অহমের প্রকৃতিই হল সৃজনধর্মিতা । তাই ঈশ্বরের মধ্যে অনন্ত সৃজনধর্মিতার বীজ নিহিত আছে । ইকবাল বলেন ঈশ্বর হল সর্বোচ্চ অহং । এই জীবজগত ও জড়জগত এই সর্বোচ্চ অহং এর প্রকাশমাত্র । জীব সীমিত অহং , ঈশ্বর সর্বোচ্চ অহং । অর্থাৎ ইকবাল প্রমাণ করলেন জীব , জড় এবং ঈশ্বর পৃথক সত্ত্বা নয় । ঈশ্বর নিজের অনন্ত সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে এই জীবজগৎ ও জড়জগতের প্রকাশ করেছেন । ঈশ্বরের এই সম্ভাবনাগুলি অনন্ত ও অসংখ্য । ইকবাল ঈশ্বরকে নিত্য বলেছেন , ঈশ্বর যেহেতু স্থান কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় তাই তিনি নিত্য । 



শেষকথা : ইকবাল সম্পূর্ণ নিজস্বতায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছেন । ঈশ্বর জগতের রক্ষক , সংহারক । ইকবাল ঈশ্বরকে এমন এক মর্যাদা দান করেছেন যার দ্বারা ঈশ্বরের শুধু শক্তিমান প্রমাণিত হয়নি । তিনি ইসলাম ধর্মের পরম পূজ্য আরাধ্য দেবতা বা কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন