উত্তর : সাংখ্য দর্শনে প্রকৃতি ভিন্ন যে মূল তত্ত্ব স্বীকৃত হয়েছে তাই পুরুষ । সাংখ্য মতে , পুরুষ বা আত্মা দেহ ,মন ,ইন্দ্রিয় , বুদ্ধি বা জড়জগতের কোন বস্তু নয় । পুরুষ স্বপ্রকাশ এবং চৈতন্যস্বরূপ । পুরুষের চৈতন্যকে গুণ মনে করলে ভুল হবে । কারণ , গুণমাত্রই দ্রব্যাশ্রয়ী । আর আত্মা কোন দ্রব্য নয় । সাংখ্যের পুরুষ বা আত্মা হল চিৎ স্বরূপ ও আনন্দস্বরূপ । অর্থাৎ চিৎ বা চৈতন্য এবং আনন্দ আত্মায় স্বরূপ সম্বন্ধে থাকে , দ্রব্য-গুণের মত সমবায় সম্বন্ধে নয় । চৈতন্য এবং আনন্দ পরস্পর ভিন্ন হলেও এরা একই আত্মায় স্বরূপ সম্বন্ধে থাকে । পুরুষ হলেন নিত্য , তার উৎপত্তি বা বিনাশ নেই । যা কিছু পরিণাম সবই প্রকৃতির । পুরুষ অপরিণামী । সুখ , দুঃখ সবই প্রকৃতির , পুরুষের নয় । তাই পুরুষ নির্বিকার । সত্ত্ব,রজঃ ও তমঃ হল প্রকৃতির গুণ , পুরুষের নয় । পুরুষের কোন গুণ নেই । তাই , পুরুষ নির্গণ । পুরুষ চৈতন্যস্বরূপ হলেও নিষ্ক্রিয় । কারণ , পুরুষ অসঙ্গ অর্থাৎ কারও সাথে পুরুষের কেনাে সম্বন্ধ নেই । সাংখ্য দর্শনে পুরুষকে দ্রষ্টা বা বিষয়ী বলা হয়েছে । পুরুষের সুখ , দুঃখ, মােহ ইত্যাদি কোন কিছুই নেই । পুরুষ হলেন , নিত্য, বুদ্ধ ও শুদ্ধ মুক্ত স্বভাব । বন্ধন বা মুক্তি পুরুষের ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য । কারণ , পুরুষই চেতন , প্রকৃতি অচেতন হওয়া বন্ধন ও মুক্তি প্রযােজ্য প্রকৃতির ক্ষেত্রে নয় । কিন্তু বন্ধন পুরুষের স্বাভাবিক অবস্থা নয় । কারণ , স্বাভাবিক অবস্থা হলে মুক্তির সম্ভাবনা থাকত না ।
পুরুষ নিত্য , শুদ্ধ, বুদ্ধ ও মুক্ত স্বভাব হলেও প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার পর পুরুষ প্রকৃতির সাথে নিজেকে অভিন্ন মনে করে প্রকৃতির সুখ , দুঃখ ভােগ করে এটিই আত্মা বা পুরুষের বন্ধন ।