মহম্মদ ইকবাল জগতের স্বরূপ কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর মহম্মদ ইকবাল জগতের স্বরূপ কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন mohmad ikbal jogoter swarup kivabe bakkha korechen questions answers


উত্তর : শুরুর কথা : যে সমস্ত দার্শনিক নিজ ভাবনা চিন্তায় ইসলাম ধর্মের সংস্কারসাধন করেছিলেন , মহম্মদ ইকবাল তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান । মহম্মদ ইকবাল ইসলাম ধর্মকে বিশ্বজনীন ধর্মে উন্নীত করেছেন । মহম্মদ ইকবাল কোরানের ইসলাম ধর্মের সত্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মানুষকে পুর্নজ্জীবিত করার জন্য , মানুষ ও ঈশ্বরের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য ,জগৎ - এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছিলেন । ইকবাল ‘Six Lecture on the Reconstruction of Religious Thought in Islam’ গ্রন্থে জগৎ - এর স্বরূপ নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করেছেন । 


জগৎ এর অস্তিত্ব : প্রচলিত ধারণা ছিল বাহ্য জগতকে প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানা সম্ভব , যেহেতু বস্তু স্থির ও অপরিবর্তনশীল । কিন্তু ইকবাল দৃঢ়তার সঙ্গে ঘােষণা করলেন । এই বাহ্য জগৎ সর্বদা পরিবর্তনশীল ও গতিময় । পরিবর্তন ও গতিময়তা যার ধর্ম তাকে প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানা সম্ভব নয় । চেতনা ও জগতের অস্তিত্ব প্রমাণ অক্ষম । অর্থাৎ, ইকবাল প্রমাণ করতে চাইলেন জগত অস্তিত্বশীল সততার মাধ্যমে জানা যায় । প্রসঙ্গত ভাববাদী দার্শনিক বার্কলে একমাত্র মনের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন । অন্যদিকে অদ্বৈতবাদী শংকর বলেছেন  ‘জগৎ মিথ্যা’ , ব্ৰষ্ম সত্য । ইকবাল কিন্তু বাস্তব দৃষ্টিতে জগতের দিকে তাকিয়েছেন এবং জগতের অস্তিত্বকে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন । ইকবাল বলেন স্বজ্ঞাজাত অন্তদৃষ্টি থেকে এই জগৎ এর অস্তিত্বকে প্রমাণ করা সম্ভব । তিনি বলেন আমরা অনুভব করতে পারি অস্তিত্ব বা অহং ছাড়াও আরেকটি শক্তি আমাদের সকল কাজে বাধা দিচ্ছে । এই বাধাদানকারী শক্তি থেকে আমরা বাহ্য জগতের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি । 


সৃষ্টিকর্তা : ঈশ্বর এই জগতের স্রষ্টা , জড় পরমাণুর সমন্বয়ে নিমিত্ত কর্তা হিসেবে ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেননি । আবার ইকবাল মনে করেন ঈশ্বর এই জগতের বাইরেও থাকেন না । এ বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে । এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন ঈশ্বর এই জগতের সৃষ্টিকর্তা জড় পরমাণু দ্বারা নিমিত্ত কর্তা হিসেবে ঈশ্বর জগতের সৃষ্টি করেছেন কিন্তু ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টিকরে তিনি জগতের মধ্যেই অবস্থানরত আছেন । ঈশ্বরের ধর্ম হল সর্বশক্তিমানতা । এই ধর্মের মাধ্যমে অনন্ত শক্তির মাধ্যমে একটি সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে । ঈশ্বর জগতের মধ্যে বিকশিত হয়েছেন । সেই কারণে ঈশ্বর জগতের অন্তর শক্তির মাধ্যমে বহিতা সত্ত্বা । আবার যেহেতু ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করে নিঃশেষিত হননি , তাই ঈশ্বরের অনন্ত সম্ভাবনাগুলি থেকে অসংখ্য জগৎ সৃষ্টি সম্ভব বলে তিনি মনে করতেন । ইকবাল বলেছেন এই জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর এবং সৃষ্টিকর্তা হিসাবে তিনি জগতের ভিতর ও বাইরে উভয় স্থানেই অবস্থানরত রয়েছেন । 


জড়জগত : ইকবাল মনে করেন এই সমগ্র জড় জগৎ এক বৃহৎ অহং । জগৎ বহু অহং এর সমষ্টি দিয়ে তৈরী । এই জড় জগতের আধার হল স্থান ও কাল । ঈশ্বর সৃষ্ট এই জড় জগৎ কীরূপ ? এর উত্তরে ইকবাল বলেন , এই জড়জগৎ হল একক ব্যক্তি ও তার সমগ্র একক । সহজ করে বললে এই সমস্ত জগৎ এক বৃহৎ অহং এর প্রকাশ মাত্র । এই অহং বৃহৎ অর্থাৎ বহু অহং এর সমষ্টি । এই কারণে জগৎ স্থির নয় । এই জগৎ ব্যক্তি অহং এর মতাে বিকাশমান । বিকাশধর্মী বিবর্তনের মতােই এই জগতের লক্ষ্য ক্রমশ উচ্চস্তরে বিকশিত হয় । অনেকে বলেন এই জড় জগতের আধার হল কাল ও স্থান । কিন্তু ইকবাল এই মতের সম্পর্কে বিরােধিতা করেছেন । ইকবাল বলেন স্থান ও কাল থেকে যদি বস্তু ও ঘটনাকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে স্থান হবে একটি বিন্দু এবং কাল হবে শূন্য । ইকবাল এইভাবে প্রমাণ করলেন স্থান ও কালের বস্তুগত ধারণা মিথ্যা । ইকবালের মতে জড় জগতের অস্তিত্বকে স্বীকার না করলে আমরা আমাদের আচরণ ও অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করতে পারবাে না । পাশ্চাত্য দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট স্থান ও কালকে বস্তুগত নয়, বিষয়গত বলেছিলেন । ইকবাল এই মতেরও বিরােধিতা করে বলেছিলেন স্থান ও কাল আপেক্ষিক । যা কান্টের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন । 


শেষকথা : যুগ পরিবর্তনতার হাত ধরে বিবর্তনের পক্ষে জোড়ালাে যুক্তির সওয়াল করে মহম্মদ ইকবাল জগতের অস্তিত্বের স্বপক্ষে এক অভিনব যুক্তি উত্থাপন করেছেন । কোরানের মধ্যে নিহীত ইসলাম ধর্মের জগৎ সৃষ্টির রহস্যকে তিনি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন