বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় মানুষের অবস্থান নিয়ে অরবিন্দ কি বলেছেন ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় মানুষের অবস্থান নিয়ে অরবিন্দ কি বলেছেন bibortoner prokriyay manusher abosthan niye arobindo ki bolechen questions answers

উত্তর : বিবর্তন কিভাবে : অরবিন্দের মতে , ব্রত্মের এই বর্তমান বিশ্বজাগতিক প্রকাশ দু'রকম প্রক্রিয়ার ফল ‘প্রতিবর্তন’ এবং ‘বিবর্তন’ । প্রতিবর্তন এমন এক প্রক্রিয়াযার মাধ্যমে সর্বব্যাপী চিৎশক্তি নিজেকে ক্রমাগত আচ্ছাদিত করতে করতে অজ্ঞানের রূপ পরিগ্রহ করে । এই প্রক্রিয়ায় নানা তত্ত্ব,নানা জগৎ ও নানা স্তরের চেতনার সৃষ্টি হয় । 


এই বিশ্বের তিনটি উচ্চতর পর্যায়কে ‘সচ্চিদানন্দের পর্যায়’ বলা যায় । এই স্তর বা পর্যায়গুলি সাধারণ মানুষের চেতনা ও অভিজ্ঞতার নাগালের বহু উপরে অবস্থিত । এরপর একটি মধ্যবর্তী স্তর থাকে যাকে ‘ মানসােত্তর স্তর’ বলা যায় । 

ক্ৰমনিম্নগত পরের তিনটি স্তর হল , যথাক্রমে ‘মানস স্তর’ ‘জৈব স্তর’ এবং ‘ভৌত স্তর’ । ভৌত স্তরই প্রতিবর্তনের শেষ স্তর, এখানেই অজ্ঞান পূর্ণরূপে অধিষ্ঠান করে । নিম্নগমনের এই শেষ স্তরটিই বিবর্তনের উর্ধ্বগমনের পথে প্রথম স্তর হয়ে ওঠে । বিশ্বব্যাপী অজ্ঞান থেকে এবার ক্রমশঃ চিৎশক্তি নিজেকে প্রকাশ করতে থাকে । ভৌত পর্যায়ের সূক্ষ্মতর শক্তি এবং চিৎশক্তির প্রভাবে বস্তুর উদ্ভব হয় । এবং মৌল বস্তু থেকে ক্রমশ এই সমগ্র ভৌত জগৎ উদ্ভূত হয় । অরবিন্দ মনে করেন , পরবর্তী উন্নততর পর্যায়ে এই দেহবিশিষ্ট চেতন প্রাণী থেকে এক মানসােত্তর স্তরবিশ্বেপ্রকাশিত হবে । চেতনায় এই নতুনতর শক্তি , পার্থিব জগতে এই নতুন পর্যায় প্রকাশের শর্তাবলী এবং এই নতুন পর্যায়বিকশিত হওয়ার ফল হিসেবে মানবজাতির সম্ভাব্য রূপান্তর । এইসব বিষয়ে অরবিন্দ তাঁর প্রধান প্রধান রচনায় বহুবিস্তৃত আলােচনা করেছেন । 



সর্বব্যাপ্ত চেতন শক্তি : প্রতিবিবর্তিত পরমসত্তা জড়ের মধ্যে নিহিত থাকলেও জড়ের অসংবেদনার অজ্ঞানের আবরণ সেই সর্বব্যাপ্ত চেতনশক্তিকে ঢেকে রাখে , সেইজন্যই এই ভৌত ব্ৰত্মান্ডের সৃষ্টির পিছনে ক্রিয়াশীল চিৎশক্তিকে অচেতন বলে মনে হয় । শেষপর্যন্ত অবশ্য এই অস্পষ্ট রহস্যময় সৃষ্টি তন্ত্রে অন্তর্নিহিত চেতনাসত্তা জড়ের তমসা ছিন্ন করে নির্গত হয় । তবে সেটি অতি ধীর গতিতে ঘটে প্রথমে এই চেতনা একবার ন্যূনতম মাত্রায় প্রকাশ পায়, এটিকে অধ্ব অবচেতন বা চেতনামাত্র প্রবৃত্তি বলে মনে হয় । ক্রমশঃ প্রাণসমন্বিত জড়দেহের উন্নততর সংগঠন বা আকারের মধ্যে দিয়ে চিৎশক্তি বিকশিত হতে হতে শেষে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিতে একটা উচ্চতর রূপ পায় । জড় থেকে মনে এবং মন থেকে মানসােত্তরে পার্থিব বিবর্তনের পথে প্রকৃতি যে কাজ করে চলেছে সেটি দুটি প্রক্রিয়ায় বিভক্ত – ( i ) জৈব আকারের বিবর্তন এবং ( ii ) আত্মার বিবর্তন । ভৌত বিবর্তনের একটা বাহ্য প্রত্যক্ষযােগ্য প্রক্রিয়া আছে যেখানে জৈব জনন এই প্রক্রিয়ার কারণ হিসাবে কাজ করে , জৈব জননের মাধ্যমে প্রতিটি বির্বতিত দেহে নিজস্ব বিবর্তিত চেতনার ধারাবাহিকতা বংশপরম্পরায় রক্ষিত হয় । একই সঙ্গে জৈব বিবর্তনের পাশাপাশি আত্মার বিবর্তনের আর এক অপ্রত্যক্ষযােগ্য প্রক্রিয়া চলে যেখানে পূর্ণজন্মকরণ হিসাবে কাজ করে । 


পুনর্জন্মের মাধ্যমে ব্যক্তি আত্মা তার অন্তর্নিহিত চেতনার ব্যাপকতর প্রকাশে সক্ষম হয়ে ওঠে এবং এভাবে বিশ্বাত্মার পূর্ণ প্রকাশের পক্ষে জড়বস্তুই একটি উপায় হয়ে ওঠে । ব্যক্তির যে আত্মা বিবর্তিত হয় তাকে অরবিন্দ ‘মানবসত্তা ’ বলেছেন । এটি যেন মন , প্রাণ এবং দেহের পিছনে অবস্থান করে ।অন্যভাবে বলা যায় মন প্রাণ ও দেহ যেন মানবসত্তার প্রকাশের উপকরণ , দেহ , প্রাণ এবং মনের মৃত্যু ঘটলেও মানবসত্তা অমর , এটি পূণর্জন্মের মাধ্যমে এক ব্যক্তি জীবন থেকে অন্য ব্যক্তিজীবনে সঞ্চারিত হয়,  প্রকৃত জীবাত্মার বিকৃত প্রতিফলন হল অহং । 



মানব প্রজাতি : বিবর্তনের তরঙ্গচুড়ার শীর্ষে মানব প্রজাতির অবস্থান । অচেতন থেকে চেতনায় বিবর্তনের পথ মানুষের মধ্যে দিয়েই উন্মুক্ত হয় । বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় চলমানতায় পৃথিবীতে মানবমন ও মানবদেহের আবির্ভাব এক চূড়ান্ত পরিবর্তন সূচিত করে । এটি বিবর্তনের কোনাে গতানুগতিক অনুবৃত্তি নয় । উন্নত চিন্তায় সক্ষম এই মানবপ্রজাতির আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত জড় সৃষ্টির কোনাে পর্যায়ে আত্মসচেতন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা অভিপ্রায় বা জীবিত প্রাণীর আত্ম অন্বেষণের ভিত্তিতে বিবর্তন ঘটেনি ; প্রকৃতির স্বয়ংক্রিয় কার্যপদ্ধতির মাধ্যমে অর্ধচেতনভাবে বিবর্তন সংঘটিত হয়েছে ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন