কর্মযােগ সম্পর্কে বিবেকানন্দের দর্শনগত ধারণা ব্যাখ্যা করাে । কর্মযােগ থেকে কীভাবে অমরত্বের উপলব্ধি হয় তা বর্ণনা করাে ।

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর কর্মযােগ সম্পর্কে বিবেকানন্দের দর্শনগত ধারণা ব্যাখ্যা করাে কর্মযােগ থেকে কীভাবে অমরত্বের উপলব্ধি হয় তা বর্ণনা বর্ণনা করাে kormoyog somporke bibekanonder dorshongoto dharona bakkha koro kormoyog theke kivabe amortotter upolobdhi hoi ta bornona koro


উত্তর।  কর্মযােগ একটি তন্ত্র : বিবেকানন্দ বলেন কর্মযােগ হল নৈতিকতা ও ধর্মের এমন এক তন্ত্র যা অস্বার্থপর এবং শুভ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম করে । কর্মযােগ বলতে কর্মের মাধ্যমে জীবনের চরম বা পরম লক্ষ্য প্রাপ্তিকে বােঝায় । কর্মযােগের ক্ষেত্রে কর্মকে দু'ভাগে ভাগ করা হয় । এই দু’প্রকার কর্ম হল সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম । নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে জীবনের পরম লক্ষ্য বা পুরুষার্থ পাওয়ার যে উপায় তাই হল কর্মযােগ ।  


কর্মের মূল্য ও অস্বার্থপরতা : বিবেকানন্দ বলেন , কর্মযােগীর কোনাে তত্ত্বে বিশ্বাস করার প্রয়ােজন নেই । আত্মা কী ? এরূপ কোনাে অধিবিদ্যাগত প্রশ্ন সম্পর্কে তার চিন্তা করার প্রয়ােজন নেই । নিঃস্বার্থপরতার উপলব্ধির মাধ্যমে সে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে । এটা কর্মযােগীকে নিজেকেই করতে হয় । বিবেকানন্দ কর্মযােগের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরােপ করছেন । এই দুটি বিষয় হল — প্রথমে কর্মের মূল্য এবং গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, এখানে অস্বার্থপরতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । 


কর্মযােগে পলায়নবৃত্তি অনুমােদিত নয় : বিবেকানন্দের কর্মযােগে কর্মের মূল্য ও গুরুত্ব স্বীকৃত হওয়ায় জগৎ থেকে পলায়ন বা কৃচ্ছতাকে অনুমােদন করা হয় না । কর্মযােগে বলা হয় মানুষকে মঙ্গল অমঙ্গল , দুঃখ যন্ত্রণার এই পৃথিবীতে থাকতে হবে এবং তাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে হবে । 


কর্মযােগীর আচরণ প্রভুর মতো : কর্মযােগে অস্বার্থপরতার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয় অর্থাৎ , কর্মযােগীর কাজকে আসক্তিহীন হতে হবে বলা হয় । কর্মযােগীকে নিজেকে এই পৃথিবীতে একজন আগন্তুক ভাবতে হবে এবং সেইভাবেই তাকে কাজ করতে হবে । 


গীতার নিষ্কাম কর্মযােগ : বিবেকানন্দ গীতার নিষ্কাম কর্মযােগের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । গীতায় বলা হয়েছে ব্যক্তির কর্মের অধিকার , কর্মফলে তার কোনাে অধিকার নেই । গীতায় কর্মযােগীকে  কৃতকর্মের কোনাে ফল আশা না করে নিষ্কাম কর্ম করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে । ব্যাক্তিকে স্থায়ীভাবে দাতার ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে যেখানে সব কিছু মুক্তভাবে দান করতে হবে ।



বিবেকানন্দের ওপর বুদ্ধের প্রভাব : বিবেকানন্দ কর্মযােগের ক্ষেত্রে ভগবান বুদ্ধের জীবনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করেছেন । গৌতমবুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর অবশিষ্ট জীবন নিরন্তর কর্মে লিপ্ত ছিলেন । তার কর্ম হল আসক্তিহীন কর্মের আদর্শ । 


সর্বোচ্চ কাজ কী : বিবেকানন্দ বলেন , অর্থ,যশ বা অন্য কোনাে উদ্দেশ্য ছাড়াই যে কাজ করে তার কাজ হল সর্বোত্তম কাজ । কোনাে মানুষ যখন এভাবে কাজ করে তখন তাকে বুদ্ধ বলা যেতে পারে । তার কাছ থেকে কাজ করার সেই শক্তি নিঃসৃত হয় যা জগৎকে রূপান্তরিত করে । এরূপ ব্যক্তি কর্মযােগের সর্বোচ্চ আদর্শকে তুলে ধরতে সক্ষম হয় । 



কর্মযােগ থেকে অমরত্বের উপলব্ধি : কেউ প্রশ্ন করতে পারেন কর্মযােগ কীভাবে অমরত্বের উপলদ্ধি দিতে পারবে । বিবেকানন্দ খুব সহজ সরলভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন । তিনি বলেন সবকিছুর মধ্যে একত্বের অনুভূতিই হল অমরত্ব । এটা হল সমস্ত রকম বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি । বিবেকানন্দ বলেন এভাবে সবকিছুর মধ্যে নিজেকে চিহ্নিত করতে পারাই হল অমরত্বের উপলব্ধি ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন