বিবেকানন্দ অনুসরণে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রকৃতি ব্যাখ্যা করাে ।

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর বিবেকানন্দ অনুসরণে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রকৃতি ব্যাখ্যা করাে bibekananda anusorone manusher adhyatmik prokriti bakkha koro questions answers


উত্তর : আধ্যাত্মিক তাৎপর্য : স্বামী বিবেকানন্দের মতে , জ্ঞান হল মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি । কোনাে  জ্ঞানই তার বাইরে থেকে আসে না, সমস্ত জ্ঞানেরই অবস্থান মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে , সেইজন্য স্বামীজি বলেছেন , মানুষ হল আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্রীভবন । 


আত্মার রূপ : বিবেকানন্দের কথা অনুসারে , পবিত্র উদ্দেশ্যে করা কর্মই হল শ্রেষ্ঠ কর্ম । কেননা , আধ্যাত্মিকতা আমাদের জীবনের সমস্ত ধরনের কর্ম প্রচেষ্টার মূলভিত্তিক আধ্যাত্মিক দিক থেকে যিনি সুস্থ ও সবলরূপে গণ্য হন ,তিনি ইহা করলে অন্যান্য দিকেও প্রভূত পরিমানে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন । আমাদের অভ্যন্তরের এই আধ্যাত্মিক শক্তি যতদিন পর্যন্ত না জাগরিত হয় , ততদিন পর্যন্ত আমাদের শারীরিক অভাবগুলিও ঠিকমতাে দূরীভূত হয় না । মানুষের একটি বিশেষ প্রকৃতি আছে বলেই তার আধ্যাত্মিকতা বর্তমান । 


আত্মা ও ব্ৰত্ম অভিন্ন : বেদান্ত দর্শন পাঠে আমরা বুঝেছি শঙ্করাচার্য আত্মাকে ব্রহ্ম বলেছেন । অনুরূপভাবে , স্বামীজিও আত্মার সত্য প্রকৃতিকে ব্রষ্মের সদৃশ বলেছেন । আত্মাকে ব্রত্মের অংশ বা চরম সত্তার প্রকাশ বলা যায় না , তাই প্রাথমিকভাবে আত্মা ও ব্ৰত্মকে এক ও অভিন্ন বলতে হয় ।  

আত্মজ্ঞান পরম লক্ষ্য : স্বামী বিবেকানন্দ ও উপনিষদীয় বাণীর প্রতিধ্বনি করে বলেছেন যে, শ্রদ্ধা , বিশ্বাস, নির্ভীকতা ও মােক্ষই হল সাধকের চরম ও পরম কাম্য বস্তু । অর্থাৎ , আত্মজ্ঞানই হল মানব জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য । এইরূপ আধ্যাত্মিক চেতনা লাভ করলে মানুষের ওপর কোনাে কিছুই পাওয়ার থাকে না , এভাবেই স্বামী বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় ফুটে ওঠে ।


চেতনার বিস্তৃতি : আমরা যদি স্বার্থশূন্যতার ভাবটিকে সব সময় মনে রেখে কর্মে প্রবৃত্ত হই, তাহলে দেখতে পাবাে যে , আমরা যে সমস্ত ক্রিয়া সম্পাদন করি , তা অনেকাংশে পর্যায়ক্রমে স্বার্থহীনতার দিকে এগিয়ে চলছে । এরূপ অধ্যবসায় ও কর্মচেতনার মাধ্যমে একদিন আমরা প্রকৃতপক্ষে স্বার্থশূন্যতার নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন করতে সমর্থ হবাে । আমরা এই বিশ্বাসে উপনীত হতে পারি যে , কর্মজীবনের পথে ক্রমশ অগ্রসর হতে কোনাে না কোনাে সময় আমাদের কর্মগুলি নিঃস্বার্থপরতার আলােকে আলােকিত হবে । 

মহৎ ব্যক্তিতে উত্তরণ : আধ্যাত্মিক উপলব্ধিতে প্রেয় আমাদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত নয়, এরূপ উপলদ্ধিতে শ্রেয় ই হল আমাদের চরম কাম্য বস্তু । শ্রেয় আমাদের কাম্য বস্তুকে নির্দেশ করে এবং ভােগবাসনায় মত্ত করে তােলে । এর ফলে আত্মার বন্ধন দৃঢ় থেকে আরও দৃঢ়তর হয় । মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ যে কাম্য বস্তু অর্থাৎ মুক্তি তা ক্রমশ দূরে সরে যায় । শ্রেয়কে পেলে আর অন্য কিছু পাওয়ার থাকে না । আধ্যাত্মিক উপলদ্ধিতে প্রেয় অপেক্ষা শ্রেয়ই যে একান্তভাবে কাম্য তা বােঝাবার জন্য বিবেকানন্দ তার ‘কর্মযােগ ’ গ্রন্থে কঠোপনিষদ থেকে নচিকেতার উপাখ্যানটির অবতারণা করেছেন ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন