জাতি ও উপাধির মধ্যে প্রভেদ কর । বিভিন্ন প্রকার জাতিবাধক আলােচনা করাে ।

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy জাতি ও উপাধির মধ্যে প্রভেদ কর বিভিন্ন প্রকার জাতিবাধক আলােচনা করাে jati o upadhir modhey proved koro bivinno prokar jatibadhok alochona koro questions answers


উত্তর : জাতি ও উপাধির ভেদ : বৈশষিক মতে,সামান্য জাতি ও উপাধি ভেদে দু'প্রকার জাতিমাত্রই সমান্য । কিন্তু সামান্য মাত্রই জাতি নয় । যে অনুগত ধর্ম জাতির লক্ষণে  প্রযােজ্য হয় তাই জাতি । আর যে অনুগত ধর্মজাতির লক্ষণে প্রযােজ্য নয় তাই উপাধি । জাতি হল সেই অনুগত ধর্ম যা নিত্য এবং অনেকানুগত । অর্থাৎ স্বাভাবিক ধর্মই জাতি । আর উপাধি হল আগন্তুক ধর্ম । যেমন — ‘মনুষত্ব’ হল জাতি । কারণ , এটি সকল মানুষের স্বাভাবিক ও অপরিহার্য ধর্ম । কিন্তু ‘অন্ধত্ব’ হল উপাধি । কারণ , এটি স্বাভাবিক ও অপরিহার্য ধর্ম নয়, এটি আগন্তুক ধর্ম । 

জাতিবাধক : জাতিকবাধক অর্থাৎ যা জাতির ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ । জাতিবাধক না থাকলে অনুগত ধর্মকে জাতি বলে । আর জাতিবাধক থাকলে সেক্ষেত্রে অনুগত ধর্মটি হয় উপাধি । কোন অনুগত ধর্মকে জাতি হওয়ার জন্য যে সমস্ত লক্ষণগুলি থাকা প্রয়ােজন সেই লক্ষণগুলিই জাতিবাধক হিসাবে কাজ করে । 


বিভিন্ন প্রকার জাতিবাধক : কোন্ অনুগত ধর্মটি জাতি এবং কোন্‌টি উপাধি তা নিদ্ধারর্নের ক্ষেত্রে উদয়নাচার্য ‘কিরণাবলী’ গ্রন্থে মােট ছয়টি জাতিবাধকের আলােচনা করেছেন । যথা- ( ১) ব্যক্তির অভেদ  (২ ) তুল্যত্ব ( ৩) সঙ্কর ( ৪ ) অনবস্থা  ( ৫ ) রূপহানি এবং (৬ ) অসম্বন্ধ ।


( ১ ) ব্যক্তির অভেদ : কোন ধর্মের আশ্রয় যদি একটি মাত্র হয় তাহলে সেই ধর্মকে জাতি বলা যাবে না । আশ্রয় যদি একাধিক না হয় তাহলে সেই ধর্মটি অনেকানুগত হয় না । যেমন — আকাশ , দিক , কাল — এদের ক্ষেত্রে আকাশত্ব , দিকত্ব , কালত্ব প্রভৃতি ধর্মগুলিকে জাতি বলা যাবে না । কারণ এগুলি একবক্তিমাত্রবৃত্তি । এদের একাধিক ব্যক্তি না থাকায় এটি উপাধি । এবং ‘একাধিক ব্যক্তি না থাকা’ হল উপাধি । 


( ২ ) তুল্যত্ব : ‘তুল্য' অর্থাৎ সমান সমান । বেশিও নয় কমও নয় । যদি দুটি ধর্মের অধিকরণ একই হয় তাহলে ওই দুটির পরিবর্তে একটি জাতি স্বীকৃত হবে । অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে দুটিকে ভিন্ন জাতি বলা যাবে না । যেমন — ঘটত্ব ও কলসত্ব । এই দুটি একই অধিকরণে থাকায় এদের যে কোন একটিকে জাতি বলা যাবে কিন্তু দুটিকে ভিন্ন দুটি জাতি বলা যাবে না । এক্ষেত্রে ‘তুল্যত্ব’ জাতির বাধক নয় , জাতিভেদের বাধক ।


( ৩ ) সঙ্কর : যদি কোন দুটি ধর্ম পরস্পরের অভাবের অধিকরণে থাকে আবার , একই অধিকরণেও থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সঙ্কর হয় । সঙ্কর হল জাতির বাধক । সঙ্কর ঘটলে দুটি ধর্মের কোনটিকেই জাতি বলা যাবে না । যেমন — ভূতত্ব এবং মূর্তত্ব । এই দুটি ধর্মের কোনটিই জাতি নয় । কারণ , এই ধর্ম দুটি পৃথিবী জল , বায়ু ও তেজ চারটিতে একত্রে থাকে । আবার , পরস্পরের অভাবের অধিকরণেও থাকে ।যেমন — আকাশে ভূতত্ব থাকে কিন্তু মুর্তত্ব থাকে না । তেমনি মনে মূর্তত্ব থাকলেও ভূতত্ত্ব থাকে না । কারণ, মন ভৌতিক দ্রব্য নয় ।


( ৪ ) অনবস্থা : ন্যায় বৈশেষিক মতে , জাতির কোন জাতি থাকে না । অর্থাৎ জাতির ক্ষেত্রে ‘জাতিত্ব’ স্বীকার করা হয় না । কারণ , তাহলে তারও জাতি অর্থাৎ ‘জাতিত্ব’ মানতে হয় এবং এইভাবে জাতি পরম্পরায় অবস্থা দোষ হয় । এজন্য জাতিত্ব হল জাতিবাধক । 



( ৫ ) রূপহানি : বিশেষ পদার্থের ক্ষেত্রে ‘বিশেষত্ব’টি অনুগত ধর্ম হলেও এটি জাতি নয় । কারণ , বিশেষ স্বত্তোব্যবৰ্ত্তক । আর , বিশেষত্বকে জাতি বললে বিশেষের এই স্বততাব্যবৰ্ত্তক রূপের হানি হয় । যদি কোন পদার্থের জাতি স্বীকার করলে তার স্বরূপের  হানি হয় তাহলে সেই জাতিটি জাতি না হয়ে জাতি বাধক হবে ।


( ৬ ) অসম্বন্ধ : অসম্বন্ধের অর্থ সম্বন্ধের অভাব ।ন্যায় বৈশেষিক মতে , জাতি ব্যক্তির সম্বন্ধ হল সমবায় । যেমন — ঘট ব্যক্তির সাথে ঘটত্ব জাতির সম্বধ হল সমবায় । সমবায়ের অনুগত ধর্ম হবে সমবায়ত্ব তেমনি অভাবের অনুগত ধর্ম হবে অভাবত্ব । এই সময়বায়িত্ব ও অভাবত্ব অনুগত ধর্ম হলেও জাতি নয় । কারণ , সমবায় এবং অভাব কোন পদার্থে সমবায় সম্বন্ধে থাকে না । ফলে , সমবায়ত্ব জাতি নয়, জাতি বাধক । 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন