বৈশেষিক মতে দ্রব্য কাকে বলে ? দ্রব্য কয় প্রকার ও কি কি ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy বৈশেষিক মতে দ্রব্য কাকে বলে দ্রব্য কয় প্রকার ও কি কি boiseshik mote drobbo kake bole drobbo koi prokar o ki ki questions answers


উত্তর : বৈশেষিক দর্শন স্বীকৃত সপ্ত পদার্থের মধ্যে দ্রব্য হল একটি ভাব পদার্থ । মহর্ষি কণাদ ‘বৈশেষিক সূত্রে’ দ্রব্যের লক্ষণ করেছেন , “ক্রিয়াগুণবৎ সমবায়িকারণম ইতি দ্রব্যলক্ষণ” – অর্থাৎ যা ক্রিয়াবৎ অর্থাৎ ক্রিয়ার আশ্রয় এবং গুণবৎ অর্থাৎ গুণের আশ্রয় এবং তারই সমবায়িকারণ তাই দ্রব্য । 


ক্রিয়াবৎ দ্রব্যম্ : দ্রব্যের এই লক্ষণটিতে তিনটি পদ আছে , ক্রিয়াবৎ অর্থাৎ কর্ম , গুণবৎ অর্থাৎ গুণ এবং সমবায়িকারণ । যদি ‘ক্রিয়াবৎ দ্রব্যম’ — অর্থাৎ যা কিছু ক্রিয়াবান বা যে আশ্রয় কর্ম থাকে তাকেই দ্রব্যের লক্ষণ বলা হতাে তাহলে লক্ষণটিতে অব্যাপ্তি দোষ হতাে । কারণ ,বৈশেষিক মতে ,আকাশ , কাল এগুলি বিভু বলে এদের কোন কর্ম বা ক্রিয়া নেই । অথচ বৈশেষিক মতে এগুলি দ্রব্য । কাজেই , যা কিছু ক্রিয়াবান্ বা কর্ম যে আশ্রয়ে থাকে তাকেই দ্রব্য বললে আকাশ ,কাল প্রভৃতি দ্রব্যে লক্ষণ পৌছায় না বলে লক্ষণটিকে অব্যাপ্তি দোষ হয় । 


গুণবৎ দ্রব্যম্ : আবার , যদি দ্রব্যের লক্ষণে শুধুমাত্র ‘গুণবৎ’ বা গুণবান্ কথাটি ব্যবহার করা হয় তাহলে লক্ষণটিতে অব্যাপ্তি দোষ হয় । কারণ , যা কিছু গুণের আশ্রয় বা গুণ যাতে থাকে তাকেই দ্রব্য বললে আদ্যক্ষণের দ্রব্যে বা উৎপত্তিক্ষণের দ্রব্যে লক্ষণ পৌছায় না বলে অব্যাপ্তি দোষ হয় । ন্যায় বৈশেষিক মতে উৎপত্তিক্ষণের দ্রব্যে কোন গুণ থাকে না । ফলে , দ্রব্যকে গুণবান্ বললে আদ্যাক্ষণের দ্রব্যে লক্ষণের অব্যাপ্তি হয় । 

সমবায়িকারণ : সমবায়িকারণ কথাটি লক্ষণে উল্লেখ থাকায় লক্ষণটি নির্দোষ হয়েছে । কারণ , যদি শুধুমাত্র গুণ ও কর্মের আশ্রয় বলা হতাে তাহলে ক্ষিতি , অপ , প্রভৃতি নয়টি দ্রব্যে সমবায় সম্বন্ধে গুণ থাকলেও গুণে গুণ যেমন সমবায় সম্বন্ধে থাকে না তেমনি কর্মেও সমবায় সম্বন্ধে গুণ থাকে বলে দোষ হতাে । আর , সমবায়িকারণ কথাটির উল্লেখ থাকায় ঐ দোষ আর থাকে না । কাজেই , গুণ এবং কর্ম যাতে সমবায় সম্বন্ধে থাকে তাকেই দ্রব্য বলা হয় ।  


দ্রব্যের বিভাগ : বৈশেষিক দর্শনে নয়টি দ্রব্য স্বীকার করা হয়েছে । এই নয়টি দ্রব্য হল — ক্ষিতি ( পৃথিবী ), অপ ( জল ), তেজ ( অগ্নি), মরুৎ ( বায়ু), আকাশ ( ব্যোম্), দিক , কাল , আত্মা এবং মন । এই নয়টি দ্রব্যের মধ্যে প্রথম পাঁচটি দ্রব্যকে পঞ্চভূত অর্থাৎ ভৌতিক দ্রব্য বলা হয়েছে । কারণ , এই পাঁচটি দ্রব্যকে পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয় দ্বারাই জানা যায়  । অর্থাৎ এই পাঁচটি দ্রব্যেরই বহ্নিরিন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটি করে বিশেষ গুণ আছে । যেমন – পৃথিবীর বিশেষ হল গন্ধ, যা নাসিকা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, জল রসবিশিষ্ট হওয়ায় জিহ্বা ইন্দ্রিয় দ্বারা জানা যায় । তেজ রূপবিশিষ্ট , চক্ষু ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য, মরুৎ স্পর্শ বিশিষ্ট , ত্বক্ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এবং ব্যোম্ বা আকাশ শব্দ বিশিষ্ট , কর্ণেন্দ্রিয় দ্বারা গ্রাহ্য হয় । 

ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুৎ — এই চারটি নিত্য এবং অনিত্য ভেদে দু'প্রকার । ক্ষিতি, অপ , তেজ ও মরুৎ পরমাণু চারটি নিত্য । যেহেতু , পরমাণু নিরংশ ও নিবয়ব । কিন্তু, এগুলি দ্বারা উৎপন্ন সাবয়ব সমস্ত দ্রব্যই অনিত্য । সাবয়ব দ্রব্য মাত্রেরই উৎপত্তি ও বিনাশ আছে । পরমাণু প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য নয় । অনুমান প্রমাণের দ্বারা পরমাণুর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় । যেকোন সাবয়ব দ্রব্যকে ক্রমাগত বিভাজন করলে অবশেষে যে নিরংশ , নিরবয়ব ক্ষুদ্রতম অংশকে পাওয়া যায় তাই পরমাণু । এটি অতীন্দ্রিয় ।


আকাশ হল পঞ্চমভূত , এটি নিত্য , বিভু ও সর্বব্যাপী দ্রব্য । সংখ্যা , পরিমাণ , পৃথকত্ব , সংযাগ , বিভাগ হল আকাশ দ্রব্যের সামান্য গুণ । আর শব্দ হল বিশেষ গুণ । শব্দ আকাশে সমবায় সম্বন্ধ থাকে । আকাশের উদ্ভূত রূপ না থাকায় আকাশের চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হয় না । আকাশের অস্তিত্ব শব্দ দ্বারা অনুমিত হয় । শব্দত্ব যে দ্রব্যে থাকে তাই আকাশ । 


দিক , কালও নিত্য ও বিভু দ্রব্য । সংখ্যা , পরিমাণ , সংযােগ ও বিভাগ হল দিক এবং কাল উভয়েরই সামান্যগুণ । এ দুটিরও প্রত্যক্ষ হয় না ,অনুমানের সাহায্যে জানতে হয় । পূর্ব পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ ইত্যাদি ব্যবহার থেকে দিককে এবং অতীত , বর্তমান , ভবিষ্যৎ দ্বারা কালকে জানা যায় । 

বৈশেষিক মতে আত্মাও একটি দ্রব্য । আত্মা জীবাত্মা ও পরমাত্মা ভেদে দু’প্রকার । দেহ , ইন্দ্রিয়,মন থেকে আত্মাভিন্ন । চৈতন্য আত্মার একটি বিশেষ গুণ , যদিও আগন্তুক গুণ । চৈতন্য আত্মার স্বরূপ নয় । দেহ ,ইন্দ্রিয় প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে আত্মা চেতনা লাভ করে । জ্ঞন আত্মার গুণ হলেও নিত্যগুণ নয় । যেহেতু সুষুপ্তি এবং মুক্ত অবস্থায় আত্মায় জ্ঞান বা চৈতন্য থাকে না । 


জীবাত্মার জ্ঞান অনিত্য হলেও পরমাত্মার জ্ঞান নিত্য । বৈশেষিক দর্শনে পরমাত্মা বলতে ঈশ্বরকেই বুঝিয়েছেন । জীবাত্মা বহু হলেও পরমাত্মা বা ঈশ্বর এক । প্রতি জীবেই একটি করে জীবাত্মা থাকে । পৃথকত্ব , সংযােগ ,বিভাগ ,ইচ্ছা ,দ্বেষ, প্রযত্ন, ইত্যাদি জীবাত্মার গুন ।  


মনও একটি দ্রব্য । মন বাহ্য ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষের বিষয় নয় । মনকে জানা যায় সুখ,
 দুঃখ ইত্যাদি আত্মার গুণগুলিকে প্রত্যক্ষ করার জন্য মনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয় । মনও নিত্য দ্রব্য, কিন্তু পরমাণুবিশিষ্ট ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন