উত্তর : বুদ্ধপরবর্তী বৌদ্ধদার্শনিকগণ একই বৌদ্ধমতকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজেদের মতভেদ থেকে যে দুটি প্রধান সম্প্রদায়ে বিভক্ত হন সেই দুটির একটি হীনযান এবং অপরটি মহাযান সম্প্রদায় । এই দুটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভেদ লক্ষ্য করা যায় ।
১ ) হীনযান সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধ দার্শনিক হল বস্তুবাদের সমর্থক । অন্যদিকে , মহাযান সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধগণ ভাববাদের তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা করেছেন ।
২ ) হীনযান সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধরাই প্রাচীনপন্থী এবং আদি বৌদ্ধ বলে পরিচিত । ফলে তারা বৌদ্ধ মতকে কঠোরভাবে পালনের পক্ষপাতি । এদের দার্শনিক মত স্থবিরবাদ বা থেরবাদ বলে । অন্যদিকে মহাযান বৌদ্ধ সম্প্রদায় সংস্কারপন্থী হিসাবে পরিচিত । তারা প্রগতিশীল হিসাবে বৌদ্ধ মতগুলিকে জনসাধারণের উপযােগী করে দুঃখ নিবৃত্তির জন্য প্রচার করেন ।
৩ ) হীনযান বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রাচীনপন্থী হিসাবে নিজেদের মুক্তির কথা চিন্তা করে নির্দেশ ও উপদেশগুলিকে কঠোরভাবে পালন করার পক্ষপাতী । অন্যদিকে, মহাযান সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধগণ নিজ মুক্তি অপেক্ষা সকলের মুক্তির চিন্তা করে জনসাধারণের উপযােগী করে তােলার চেষ্টা করেছেন ।
৪ ) হীনযান সম্প্রদায় বৌদ্ধ মতে বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব আছে এবং সেই সত্তাকে জানা যায় । অর্থাৎ বাহ্যবস্তুর জ্ঞানলাভ করা সম্ভব । অন্যদিকে মহাযান সম্প্রদায় বাহ্যবস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করে না । তাদের মতে বস্তু এবং বস্তুর চেতনা বা জ্ঞান অভিন্ন । হীনযান এবং মহাযান সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য থাকাই স্বাভাবিক যেহেতু উভয়েই বৌদ্ধ দার্শনিক হিসাবে বুদ্ধদেবের বাণী ও উপদেশের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে ।