উত্তর : জৈন মতে কোন একটি বস্তু বাস্তবে যা , তা সেই বস্তু রূপে জানাই জ্ঞান । জ্ঞাতা , জ্ঞেয় এবং জ্ঞাতা জ্ঞেয় সম্বন্ধের ফলেই জ্ঞান উৎপন্ন হয় । এই তিনটির যে কোন একটির অভাবে জ্ঞান উৎপন্ন হয় না । জৈন মতে জ্ঞান আত্মার স্বাভাবিক গুণ । কাজেই কোন বাধা না থাকলেও আত্মা সর্বজ্ঞ হতাে । কর্মের ফলে সর্বজ্ঞ আত্মা যখন দেহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সাময়িকভাবে আত্মার সর্বজ্ঞতা চাপা থাকে । দেহ বন্ধন মুক্ত হলেই আত্মার সর্বজ্ঞতা ফিরে আসে । মুক্ত আত্মা সাক্ষাৎভাবে সকল বস্তুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে ।
জ্ঞানের প্রকার : জৈন দর্শনে জ্ঞানকে পাঁচ প্রকার বলা হয়েছে । যথা— মতি , শ্রুত , অবধি , মনঃ পর্যায় এবং কেবল ।
মতি— পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয় এবং মনের মাধ্যমে যে জ্ঞান হয় তাই মতি । ফলে , বাহ্য প্রত্যক্ষ ,অন্তঃ প্রত্যক্ষ,স্মৃতি, প্রত্যভিজ্ঞা এবং অনুমান সবই মতি জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত । সাধারণতঃ , ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকে প্রত্যক্ষ বলা হলেও জৈন মতে প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে লব্ধ বলে এটি পরােক্ষ জ্ঞান । স্মৃতি, প্রত্যভিজ্ঞা, অনুমান ও পরােক্ষ জ্ঞান যেহেতু পূর্ব জ্ঞানের দ্বারা অর্জিত হয় ।
শ্রুত — শ্রুত অর্থাৎ কোন বিশ্বাসযােগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে অথবা শাস্ত্রবাক্য থেকে যে জ্ঞান হয় । অন্যান্য দর্শনে একেই শব্দজ্ঞান বলা হয়েছে ।
অবধি — সাধনার দ্বারা অসাধারণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে জ্ঞান তাই অবধি । একেই যােগজ প্রত্যক্ষ বলে ।
মনঃপর্যায় – অপর ব্যক্তির মনের সুখ -দুঃখ ইত্যাদি বিষয়ে যে জ্ঞান । এটি রাগ , দ্বেষ, হিংসা প্রভৃতি রিপুগুলিকে জয় করলে তবে যে শক্তির উদ্ভব হয়, তার দ্বারাই জানা যায় ।
কেবল — একমাত্র সিদ্ধপুরুষই এরূপ জ্ঞানের অধিকারী । কেবল জ্ঞান দ্বারা সর্বকালের সর্বদেশের সমস্ত কিছুকে সাক্ষাৎভাবে জানা যায় ।