উত্তর : ভারতীয় দর্শনের সাম্প্রদায়গুলি দুটি ভাগে বিভক্ত — আস্তিক ও নাস্তিক । নাস্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত দর্শন তিনটি — চার্বাক, জৈন ও বৌদ্ধ দর্শন । আর আস্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত দর্শন ছয়টি — ন্যায়, বৈশেষিক , সাংখ্য , যােগ , মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শন ।
চার্বাক দর্শন : চার্বাক দর্শনের প্রবর্তক বৃহস্পতি । একে বাস্পত্যদর্শনও বলে । এদের মূল গ্রন্থ পাওয়া যায় না । তবে , জড়বাদী দর্শন হিসাবে জড়কেই জগতের মূল তত্ত্ব বলে মনে করে । চৈতন্যও জড়ের দ্বারা সৃষ্টি । প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ । ফলে , দেহাতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্ব মানে না । মৃত্যুই মুক্তি । তাদের মূল বক্তব্য হল ,‘প্রত্যক্ষমেকৈব প্রমাণ’ ‘চৈন্যবিশিষ্ট দেহ এব আত্মা’ ‘মরণং চ অপবর্গঃ’ ইত্যাদি ।
জৈন দর্শন : জৈন দর্শন ২৪ জন তীর্থঙ্কর দ্বারা সৃষ্ট । যার প্রথম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ এবং শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর । ফলে , কোন মূল গ্রন্থ নেই । প্রত্যক্ষ অনুমান ও শব্দকে প্রমাণ বলে মেনেছেন । এদের মূল তত্ত্ব হল ‘স্যাদবাদ ও সপ্তভঙ্গী নয়’ ‘অনেকান্তবাদ’ জীব বা আত্মার বন্ধন ও মুক্তির ক্ষেত্রে ‘ত্রিরত্ন’ - এর কথা বলা হয় । ‘তত্ত্বৰ্থাধিগম সূত্র’ কে মূল গ্রন্থ বলে মনে করা হয় । জৈনদের শ্বেতাম্বর ও দীগম্বর নামে দুটি ভাগ আছে ।
বৌদ্ধ দর্শন : বৌদ্ধ দর্শনের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ । এদের মূল গ্রন্থ তিনটিকে একত্রে ত্রিপিটক বলা হয় , যেখানে বুদ্ধের বাণী সংকলিত হয়েছে । বৌদ্ধ দর্শনের মূল তত্ত্ব হল । ‘চারটি আর্যসত্য’ ‘প্রতীত্য সমুৎপাদবাদ’ ‘কর্মবাদ’ ‘অনিত্যবাদ’ ‘নৈরাত্ম্য বা অনাত্মবাদ’ বৌদ্ধদর্শনের দুটি সম্প্রদায় হল হীনযান ও মহাযান । হীনযান সম্প্রদায়ের দুটি বিভাগ হল — সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক । আর মহাযান সম্প্রদায়ের দুটি বিভাগ হল — যােগাচার ও মাধ্যমিক । বৌদ্ধ দর্শন অষ্টাধিক মার্গের মাধ্যমে আত্মার দুঃখ মুক্তিকে মেনেছেন ।