ব্ৰহ্ম সম্পর্কে শঙ্করের মত আলােচনা কর ।

 

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy ব্ৰহ্ম সম্পর্কে শঙ্করের মত আলােচনা কর brommo somporke shankarer mot alochona koro questions answers

উত্তর : ‘ব্ৰহ্ম’ শব্দটি ‘বৃহ’ ধাতুর সাথে ‘ম ’ প্রত্যয় যােগে নিষ্পন্ন । ‘বৃহ’ ধাতুর অর্থ বিরাট বা মহৎ । ‘মন’ ’ প্রত্যয়ের অর্থ অতিশয় । কাজেই , ব্যুৎপত্তিগত অর্থে যা অর্থ অতিশয় বিরাট তাই ব্ৰহ্ম । শঙ্করের মতে , ব্রহ্ম হলে নিত্যশুদ্ধ , নিত্যবৃদ্ধ ও নিত্যমুক্ত স্বভাবসম্পন্ন , নিগুণ , নিষ্ক্রিয় , নিরবয়ব , নির্বিশেষ এক এবং অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দস্বরূপ ও সমস্ত প্রকার ভেদ রহিত । সৎ , চিৎ ও আনন্দ ব্রহ্মের কোন গুণ বা বিশেষণ নয় । এগুলি হল ব্রহ্মের স্বরূপ । সৎ অর্থাৎ যা অপরিণামী  , যার কোন পরিবর্তন নেই বা যিনি কোন জ্ঞানের দ্বারা বাধিত হন না । ‘চিৎ’ অর্থাৎ জ্ঞানস্বরূপ , যেখানে অজ্ঞান থাকে না এবং আনন্দস্বরূপ । এগুলি গুণ হলে গুণ গুণী ভেদ মানতে হয় বলে এগুলিকে ধর্ম বা গুণ না বলে স্বরূপ বলেছেন । 



শঙ্করের মতে , ব্রহ্ম সত্য , জগৎ মিথ্যা , জগৎ হল ব্রহ্মের বিবর্ত । তিনি পারমার্থিক দিক থেকে জগৎকে মিথ্যা বললেও জগতের প্রতিভাসিক ও ব্যবহারিক সত্তা স্বীকার করেছেন । কাজেই , শঙ্করের মতে , সত্তা তিন প্রকার – প্রাতিভাসিক সত্তা , ব্যবহারিক সত্তা এবং পারমার্থিক সত্তা । প্রাতিভাসিক সত্তা ব্যবহারিক জ্ঞানের দ্বারা বিনষ্ট হয় বলে প্রতিভাসিক সত্তাকে মিথ্যা কার্য বলা হয়েছে । যেমন— রজ্জুসর্প ভ্ৰমস্থলে সর্পের সত্তা পরবর্তী যথার্থ ব্যবহারিক জ্ঞান বা রজ্জুর জ্ঞানের দ্বারা বিনষ্ট হয় । ব্ৰহ্ম জ্ঞান হওয়ামাত্র জগতের জ্ঞান ব্রহ্মের বিলীন হয় বলে প্রমাণিত হয় যে ব্রহ্মের অজ্ঞান থেকেই জগতের সৃষ্টি । শঙ্করের মতে , যা পরবর্তী জ্ঞানের দ্বারা বিনষ্ট হয় তা সত্য নয় বলে ব্যবহারিক জগতকে শঙ্কর মিথ্যা বলেছেন । শঙ্করের মতে , প্রতিভাসিক ও ব্যবহারিক সত্তার ব্রহ্মভিন্ন সত্তা না থাকায় এগুলি মিথ্যা । 




শঙ্করের মতে জগৎ হল ব্রহ্মের বিবর্ত কার্য । বিবর্ত বিষয়টি সর্বদাই মিথ্যা হয় । যেমন – রঞ্জুর বিবর্ত সর্পটি মিথ্যা । একই ভাবে জীবজগৎ সবই ব্রহ্মের বিবর্ত বা মিথ্যা কার্য । জীব নিজের অজ্ঞানবশত ব্ৰহ্ম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে । শঙ্করের মতে , সৃষ্টি , স্থিতি ও লয়ের কারণ স্বরূপ যে ব্রহ্মের কল্পনা তাও মিথ্যা । যার কোনাে অভাব নেই তিনি কোন ক্রিয়া করতে পারেন না । তাই ব্রহ্ম হলেন নিষ্ক্রিয় । 


অদ্বৈতবাদে শঙ্করাচার্য ব্রহ্মকে নির্গুণ , নিষ্ক্রিয় , নিরবয়ব , সমস্ত প্রকার ভেদরহিত এক এবং অদ্বিতীয় সত্তা বলেছেন । ব্রহ্ম ভিন্ন জীবজগতে পৃথক্ কোন্ সত্তা নেই । শঙ্করের মতে , ভেদ তিন প্রকার – (১ ) সজাতীয় ভেদ , (২ ) বিজাতীয় ভেদ এবং ( ৩) সগত ভেদ । সজাতীয় ভেদের অর্থ একজাতীয় একাধিক বিষয়ের মধ্যে যে ভেদ । যেমন , দুটি গরুর মধ্যে যে ভেদ । ব্রহ্মে সজাতীয় ভেদ স্বীকার করলে একাধিক ব্রহ্মের সত্তা মানতে হয় বলে ব্রহ্মকে এক বলা যায় না । আবার , বিজাতীয় ভেদের অর্থ দুটি ভিন্ন জাতীয় বিষয়ের মধ্যে যে ভেদ যেমন একটি গরু ও একটি ঘােড়ার মধ্যে যে ভেদ । ব্রহ্ম বিজাতীয় ভেদ স্বীকার করলে ব্রহ্মভিন্ন অপর বিষয়ের সত্তা মানতে হয় বলে ব্রহ্মকে অদ্বিতীয় বলা যায় না । আর , সগত ভেদ স্বীকার করলে অংশ অংশী সম্বন্ধ মানতে হয় বলে ব্রহ্মে কোনপ্রকার ভেদই স্বীকার করা হয় না । ব্রহ্মের অংশ মানতে ব্রহ্মের অংশ দ্বারাই তিনি বিশেষিত হবেন । ফলে , ব্রহ্মকে আর নির্বিশেষ বলা যাবে না । এজন্য ,শঙ্করাচাৰ্য ব্রহ্মকে সমস্ত প্রকার ভেদ রহিত , নির্গুণ , নিষ্ক্রিয় এক এবং অদ্বিতীয় শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ বলেছেন । 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন