উত্তর : দিব্যজীবন : দিব্য ও ভৌত অস্তিত্ব আটটি পর্যায়ে অতিমন এর বিন্দুতে মেলে । অরবিন্দের দর্শনে এটি একটি মূল বক্তব্য । শান্ত এবং বিচ্ছিন্নাত্মক মনের মাধ্যমতা ব্যতিরেকে আমরা কখনােই সচ্চিদানন্দ ব্রত্মের সাক্ষাৎ চেতনালাভের আশা করতে পারি না । ব্রত্মের চেতনা আমাদের মনের নাগালের বাইরে , সেজন্য এমন চেতনাকে ‘মানসােত্তর চেতনা’ অরবিন্দ বলেন ‘Truth -consciousness’ বলা যায় । মনের থেকে উন্নততর তত্ত্ব যে অতিমন আমাদের মধ্যে নিহিত ও সুপ্ত রয়েছে তাকে জাগ্রত করতে পারলেই কেবল আমরা মানসােত্তর চেতনায় পৌঁছাতে পারি ।ঈশ্বরােপলদ্ধির জন্য অধ্যাত্মবাদীরা বুদ্ধি , আবেগ , ইচ্ছা ইত্যাদি বিভিন্ন মানসবৃত্তির চর্চা এবং প্রসার ঘটাতে চেয়েছেন ।’ ব্যক্তিসত্তা সীমিত দেহ , প্রাণ এবং মনের সঙ্গে অভিন্ন’ – এরকম ভ্রান্ত ধারণাকে বৌদ্ধিক পথে দূর করার চেষ্টা হয়েছে । এরকম জানানাের চেষ্টা করা হয়েছে যে ঈশ্বরের সেই পরম প্রকৃত সত্তা যা প্রতিটি ব্যক্তির অস্তিত্বে লীন হয়ে আছে ।
প্রক্রিয়া : ঈশ্বরােপলদ্ধি ও ব্যক্তি আত্মার বন্ধন মুক্তির উদ্দেশ্যে উক্ত তিন পদ্ধতি অনেক সময় নানাভাবে সংযুক্তও করা হয়েছে । যদিও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির জন্য উপরিউক্ত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মননবৃত্তির চর্চা আবশ্যিক । তবু মানুষ যে সর্বোত্তম লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম সেখানে পৌঁছানাের পক্ষে এরকম চর্চা যথেষ্ট নয় , কেননা , অরবিন্দ দেখান যে উপরিউক্ত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বদলে মূলতঃ ব্যক্তিসাধকের সঙ্গেই সম্পৃক্ত । এক কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থূল মনকে ক্ৰমশঃ উন্নত করে পূর্বোক্ত অতিমানস স্তরে ব্যক্তির পক্ষে পৌঁছানাে সম্ভব — ( i ) প্রথমে স্থূল মনকে সেই উন্নততর মনে উন্নীত করতে হবে যে মন সবসময়েই প্রবলতর সত্যের ধারণা , সচ্চিদানন্দ ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা করে এবং এই চিন্তার মাধ্যমে ইচ্ছা,আবেগ ,প্রাণ ইত্যাদিতে বিশুদ্ধ এবং গতিশীল করে । ( ii ) এই মনকে এবার আলােকিত মনে উন্নীত করতে হবে যে মন পরম সত্তার অন্তর্নিহিত আলােক গ্রহণ করে এবং সেইসঙ্গে নিম্নতর জৈবিক এবং দৈহিক উপাদানসমূহকে আরাে রূপান্তরিত করে ।
( iii ) এই উন্নত মনকে এবার সেই স্বজ্ঞায় উপনীত করতে হবে যে স্বজ্ঞা আধ্যাত্মবােধের মাধ্যমে পরম সত্তার প্রত্যক্ষ জ্ঞন প্রকাশে সক্ষম ।
অদ্বৈতবাদ : এইভাবে যখন ব্যক্তির অহং ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে ওঠে , ব্যক্তির ইচ্ছা পরমসত্তার ইচ্ছার সঙ্গে অভিন্ন হয়, ব্যক্তির সমগ্র অস্তিত্ব প্রােজ্জ্বলএবং ঈশ্বরায়িত হয়ে ওঠে , তখন সেই অতিমানস সত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি ঐশ্বরিক শক্তির মূর্তরূপ হয়ে ওঠে , তখন সে এমন একজন আধ্যাত্মিক নেতা হয়ে ওঠে যে সমগ্র মানবজাতিকে ঐশ্বরিক স্তরে উন্নীত করতে সক্ষম যে প্রকৃতই এক অতিমানব হয়ে ওঠে । তবে , অরবিন্দ আমাদের মনে করিয়ে দেন , এই অতিমানব নীৎসে কথিত অতিমানব নয় । কেননা অরবিন্দের মতে নীৎসে কথিত অতিমানব প্রকৃতপক্ষে এক অতি জীব মাত্র যার মধ্যে কেবল ইচ্ছার জৈবিক দিকটাকেই বহুগুণে বর্ধিত করা হয়েছে মাত্র ।