উত্তর : সাধারণতঃ আস্তিক বলতে পরলােক ও ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং নাস্তিক বলতে পরলােক ও ঈশ্বরে অবিশ্বাসকে বোঝালেও ভারতীয় দর্শনে আস্তিক বলতে বেদে বিশ্বাস এবং নাস্তিক বলতে বেদে অবিশ্বাসকে বােঝায় । বেদে অবিশ্বাসী বলতে বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করা । বা বেদের প্রামাণ্য বিশ্বাসী । নাস্তিক হল বেদের প্রমাণ্য যারা মানে না এবং বেদের বিরােধী । আর , আস্তিক হল যারা বেদ -নির্ভর ।
আস্তিক ও নাস্তিক দর্শনের প্রভেদ : প্রথমতঃ , ন্যায়, বৈশেষিক , সাংখ্য , যােগ মীমাংসা ও বেদান্ত হল আস্তিক দর্শন । এরা বেদকে প্রামাণ্যও অভ্রান্ত গ্রন্থ বলে মনে করে এবং বেদের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য স্বীকার করে । অন্যদিকে , চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে হল নাস্তিক দর্শন । এদের মতে , বেদ অভ্রান্ত ও প্রামাণ্য কোন গ্রন্থ নয় । ফলে , বেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব এরা মানে না ।
দ্বিতীয়তঃ , আস্তিক দর্শন বেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব স্বীকার করায় এদের বৈদিক দর্শন বলা হয় । অন্যদিকে , নাস্তিক দর্শন বেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব স্বীকার না করায় এদের অবৈদিক দর্শন বলে ।
তৃতীয়তঃ , আস্তিক দার্শনিকদের মধ্যে মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শন সাক্ষাৎভাবে বেদের ব্যাখ্যা করায় এরা বেদ -নির্ভর আর , ন্যায়-বৈশেষিক , সাংখ্য ও যােগ দর্শন সাক্ষাৎভাবে বেদের উপর প্রতিষ্ঠিত না হলেও তারা বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করে । অন্যদিকে ,চার্বাক , বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন বেদ বিরােধী । এদের মধ্যে জৈন দর্শন বেদ বিরােধী হলেও বেদের তত্ত্ব খন্ডনের চেষ্টা করেনি বলে জৈন দর্শন নরমপন্থী । আর , বৌদ্ধ এবং চার্বাকগণ সরাসরি বেদের বিরােধিতা করে খন্ডনের চেষ্টা করায় এরা চরমপন্থী ।
চতুর্থতঃ , আস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে ন্যায়, বৈশেষিক , যােগ এবং বেদান্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও গুরুত্ব স্বীকার করে । আর , সাংখ্য এবং মীমাংসা আস্তিক দর্শন হলেও তারা সৃষ্টিকর্তারূপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি । চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানে না । এদের মধ্যে চার্বাক আত্মার মুক্তি, পরলােক কোন কিছুই মানেনি । কিন্তু বৌদ্ধ দর্শন নির্বাণ এবং জৈন দর্শন আত্মার মুক্তি স্বীকার করে ।