ভারতীয় চিন্তায় চার্বাক দর্শনে অবদান কি ? আলােচনা কর ।

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy ভারতীয় চিন্তায় চার্বাক দর্শনে অবদান কি আলােচনা কর bharotiyo chintai charbak dorshone abodan ki alochona koro questions answers


উত্তর : স্বাধীন চিন্তা : চার্বাক দর্শন ভারতীয় দর্শন চিন্তার দিক থেকে অতিপ্রাচীন । এটি স্বাধীন চিন্তার একটি দর্শন । এদের দৃষ্টিভঙ্গি হল জড়বাদের অনুরূপ । তাই একমাত্র প্রত্যক্ষকেই প্রমাণ বলে স্বীকার করে । ফলত ? যা কিছু প্রত্যক্ষের বিষয় হয় কেবল তাই সত্য ও অস্তিত্বশীল । আর , যে বিষয়ের প্রত্যক্ষ হয় না তার কোনাে অস্তিত্বই থাকতে পারে না । ফলে , অপ্রত্যক্ষযােগ্য কোন বিষয় স্বীকার করা যায় না , এরূপ প্রত্যক্ষবাদের দৃষ্টিতে চার্বাকরা কর্মবাদ , স্থায়ী আত্মার অস্তিত্ব, স্বর্গ নরক , পরজন্ম বা জন্মান্তর , পাপ পুণ্য, ঈশ্বর সমস্ত কিছুকেই অস্বীকার করেছেন । 

জড়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি : চার্বাক দর্শন জড়বাদের তত্ত্বই প্রচার করেছে । জড়বাদ অনুযায়ী জড়ই জগতের যাবতীয় সৃষ্টি মূলতত্ত্ব । অজড় কোন তত্ত্ব নেই । আপাতভাবে চৈতন্য , আত্মা ইত্যাদিকে অজড় বলে মনে করা হলেও এগুলিও জড় থেকেই সৃষ্ট । চৈতন্য বা চেতনা হল দেহেরই একটি বিশেষ গুণ , যা ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুৎ চারটি ভূতের নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশ্রণের মধ্য দিয়ে দেহ সৃষ্টির সময় আবির্ভূত হয় । কাজেই , চৈতন্য দেহেরই গুণ । আত্মাও চার্বাক মতে ,বিনাশী । কারণ, চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা । ফলে , দেহের বিনাশে আত্মারও বিনাশ ঘটে । এটিই চার্বাকদের দেহাত্মবাদ । 


ভূত চতুষ্টয়বাদ : চার্বাকরা প্রত্যক্ষবাদী । ফলে , যা কিছু প্রত্যক্ষের বিষয় হয় তাই সত্য , যার প্রত্যক্ষ হয় না তা সত্য নয় । ক্ষিতি, অপ , তেজ এবং মরুৎ এই চারটি জগতের মূল উপাদান বা তত্ত্ব হলেও এদের পরমাণু প্রত্যক্ষের বিষয় নয় বলে পরমাণু চার্বাকর স্বীকার করে না । প্রত্যক্ষযােগ্য ভূতই তারা স্বীকার করে । এটি ভূতচতুষ্টয় বাদ । 



প্রত্যক্ষই প্রমাণ : চার্বাকমতে , প্রমা’র অর্থ যথার্থ জ্ঞান । আর যথার্থ জ্ঞানের করণই প্রমান । কাজেই , যে উপায়ে যথার্থ জ্ঞানলাভ করা যায় তাই প্রমাণ । প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান মাত্রই সত্য , যথার্থ ও নিশ্চিত বলে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ । অনুমান , শব্দ ইত্যাদি দ্বারা লব্ধ জ্ঞান সম্ভাব্য , সুনিশ্চিত নয় বলে এগুলি প্রমাণ নয় । তাই প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ । 


প্রত্যক্ষযােগ্যতাই যথার্থতার লক্ষণ : চার্বাক মতে , যা কিছু প্রত্যক্ষের বিষয় তাই সত্য ও যথার্থ । ফলে ,ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলির সত্যতা বা যথার্থতা স্বীকার করা যায় কিন্তু অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সত্যতা বা বিষয়গুলির অস্তিত্ব ও যথার্থতা স্বীকার করে না । যেমন পুনর্জন্ম , স্বর্গ নরক , পাপ পুণ্য, ইত্যাদি । 


ঈশ্বর : চার্বাক দর্শনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়নি । কারণ , ঈশ্বর প্রত্যক্ষের বিষয় নয় । ভারতীয় দর্শনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় জগৎ ও জাগতিক বস্তুসমূহের সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিমিত্ত কারণ হিসেবে । কিন্তু, চার্বাকরা নিমিত্ত কারণের অস্তিত্ব স্বীকার না করে কেবলমাত্র উপাদানে কারণ হিসাবে জড় ভূত চতুষ্টয়ের স্বভাবের কথা বলেছেন । চার্বাক মতে , ক্ষিতি প্রভৃতি ভূত চারটির নিজস্ব স্বভাববশতঃই পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে জগৎ ও জাগতিক বিষয় সৃষ্টি করে । 


স্বভাববাদের বিভাগ : সুশিক্ষিত চার্বাক সম্প্রদায় সৃষ্টির ক্ষেত্রে জড়ভূতের স্বভাবকে মানলেও তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায় । স্বভাববাদীদের মতে স্বভাবই জগৎ বৈচিত্র্যের কারণ । অর্থাৎ কোন কারণ ছাড়াই কার্য সৃষ্টি হয় । এমন কি স্বভাবকেও তারা কারণ বলে মানেন না । এদের মতে আকস্মিকভাবে বা যদৃচ্ছা ক্রিয়া দ্বারাই জগৎ সৃষ্টি । আর , কিছু স্বভাববাদী চার্বাক আছেন যারা স্বভাবের কারণত্ব স্বীকার করেন । অর্থাৎ এদের মতে , জগতের বৈচিত্র্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্বভাবই হল কারণ । কাজেই , সৃষ্টিতত্ত্ব অকারণ বা অহেতুক নয় । 


মূল্যায়ণ : ভারতীয় দর্শনের প্রতিটি সম্প্রদায়ভুক্ত দার্শনিকরাই নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠার্থে চার্বাক মতগুলি খন্ডন করেছেন । আর , যুক্তি-তর্কের সাহায্যে চার্বাক মতগুলিকে খন্ডন করতে দিয়ে কুসংস্কারমুক্ত স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর তাদের দর্শনকে প্রতিষ্ঠা চার্বাক দর্শনের করার সুযােগ পেয়েছে । কাজেই , ভারতীয় দার্শনিকদের দর্শন চিন্তার ক্ষেত্রে চার্বাক দর্শনের অবদান অনস্বীকার্য ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন