উত্তর : ভারতীয় দর্শনে প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায়কে প্রমাণ বলা হয় । মীমাংসা দর্শনে অর্থাপত্তি একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানলাভের উপায় বা প্রমাণ বলে স্বীকার করা হয়েছে । ‘অর্থাপত্তি’ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল আর্থস্য আপত্তি । আপত্তি বলতে কল্পনাকে ‘অর্থস্য আপত্তি যস্মাৎ’ অর্থাৎ কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থের যে কল্পনা করা হয় তাই অর্থাপত্তি, আরও স্পষ্টভাবে বলা যায় যে ,যেক্ষেত্রে কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোন জ্ঞাত কারণকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন অজ্ঞাত কোন কারণের যে কল্পনা করা হয় তাই অর্থাপত্তি যেমন — কোন ব্যক্তি দিনের বেলায় আহার করেন না অথচ তার শরীর স্থূলকায় দেখে কল্পনা করা হয় যে , ঐ ব্যক্তি রাত্রে আহার করেন । এরূপ কল্পনাকেই অর্থাপত্তি বলে । শবরস্বামী ‘শবরভাষ্যে’ অর্থাপত্তির ব্যাখ্যায় বলেছেন , যে অদৃষ্ট বিষয়ের কল্পনা না করলে দৃষ্ট বিষয়ের কোন অসংগতির সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না, সেই অদৃষ্ট বিষয়ের কল্পনাই অর্থাপত্তি ।যেমন — দেবদত্ত জীবিত অথচ তিনি বাড়িতে নেই ।কাজেই , কল্পনা করতে হয় যে দেবদত্ত বাড়ির বাইরে কোথাও আছে । এরূপ ক্ষেত্রে ‘বাড়ির বাইরে কোথাও আছে’ – এরূপ কল্পনা না করলে বাড়িতে না থাকার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যায় না । ধর্মরাজ অধ্বরীন্দ্র ‘বেদান্ত পরিভাষায়’ বলেছেন , উপপাদ্যের জ্ঞানের দ্বারা উপপাদকের কল্পনা করাই অর্থাপত্তি ।নারায়ণ ভট্ট আবার ‘মানমেয়ােদয়’ গ্রন্থে বলেছেন ,যখন কোনকিছু অন্যভাবে অনুপপন্ন তখন তার ব্যাখ্যার জন্য যে উপপাদকের কল্পনা করা হয় তাই অর্থাপত্তি ।
মীমাংসক মতে , অৰ্থাপত্তি দু’প্রকার । যথা – (১ ) দৃষ্ট অর্থাপত্তি বা দৃষ্টাৰ্থাপত্তি এবং ( ২ ) শ্ৰত অৰ্থাপত্তি বা শ্ৰতাৰ্থাপপত্তি ।
( ১ ) দৃষ্ট অর্থাপত্তি বা দৃষ্টাৰ্থাপত্তি : কোন দৃষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি কোন বিরােধিতার সামঞ্জস্য করার জন্য কোন অদৃষ্ট বিষয়ের কল্পনা করতে হয় তাহলে তাকে দৃষ্ট অর্থাপত্তি বা দৃষ্টাৰ্থাপত্তি বলা হবে । যেমন , দেবদত্ত দিনের বেলায় আহার করেন না অথচ তার স্থূলকায় শরীরকে দেখে যখন কল্পনা করা হয় যে দেবদত্ত রাতের বেলায় আহার করেন তাহলে , এক্ষত্রে দৃষ্ট অর্থাপত্তি হবে । কারণ , এক্ষেত্রে দৃষ্ট বিষয় হল ‘বেদবত্ত দিনের বেলায় আহার করেন না’ আর , এর থেকে যে অদৃষ্ট বিষয়ের কল্পনা করা হয় তাহলে দেবদত্ত রাতের বেলায় আহার করেন ।
( ২ ) শ্ৰত অৰ্থাপত্তি বা শ্ৰতাৰ্থাপপত্তি : কোন বাক্য শ্রবণ করার পর কোন শব্দের অর্থ বােঝার জন্য কল্পনা দ্বারা যে অর্থাপত্তি প্রয়ােগ হয় তাই শ্রুত অর্থাপত্তি বা শ্রুতার্থাপত্তি । অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন কিছু শােনার পর তার অর্থ জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে কল্পনা দ্বারা যে অর্থাপত্তি ব্যবহার করা হয় তাই শ্রুত অর্থাপত্তি । যেমন, —ছেলেটি না খেয়ে কলেজে গেছে — এরূপ বাক্য শ্রবণের পর ‘ভাত’ এর কল্পনা করা হয় । এক্ষেত্রে ঐ কল্পনা দ্বারা যে অর্থ দাঁড়ায় তাহল ছেলেটি ভাত না খেয়ে কলেজে গেছে ।