বস্তুগত ভাববাদ বা পরব্রহ্ববাদ সম্পর্কে আলােচনা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর বস্তুগত ভাববাদ বা পরব্রহ্ববাদ সম্পর্কে আলােচনা কর bostugoto vabbad ba porobrohtobad somporke alochona koro


উত্তর : বস্তুগত ভাববাদের সঙ্গে আত্মগত ভাববাদের বৈসাদৃশ্য হল ,আত্মগত ভাববাদ অনুযায়ী কেবলমাত্র মন ও মননগত ধারণারই সত্তা আছে । বাহ্যবস্তুর প্রকৃত কোন সত্তা নেই । বাহ্যবস্তু হয় ব্যক্তিমন বা ঈশ্বরের মনের ধারণা মাত্র । কিন্তু বস্তুগত ভাববাদ অনুযায়ী মন ও বাহ্যজগৎ একই পরমব্রত্মে বিধৃত । মনের বিষয়রূপে বাহ্যবস্তুর সত্তা আছে । বাহ্যবস্তুর মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব নেই সত্য কিন্তু বাহ্যবস্তু কেবলমাত্র মনের ধারণা নয় । মন বা জ্ঞানের বিষয়রূপে বাহ্যজগতের আলাদা অর্থাৎ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে । 

কান্টের পরবর্তী দার্শনিকগণের হাতে কান্টের অতীন্দ্রিয় ভাববাদই বস্তুগত ভাববাদে রূপান্তরিত হল । কান্ট দৃশ্যমান জগৎ এবং অতীন্দ্রিয় জগতের মধ্যে যে বিরােধের সৃষ্টি করেছিলেন হেগেল প্রমুখ দার্শনিকগণ এই বিরােধিতাকে অস্বীকার করেন । হেগেলের মতে যে জগতকে আমরা জানছি তা প্রকৃত জগৎ । চেতনার বা জ্ঞানের বাইরে কোন অতীন্দ্রিয় জগতের অস্তিত্ব থাকে না । পরিদৃশ্যমান সত্তা বা আবভাসিক সত্তা অতীন্দ্রিয় সত্তা থেকে আলাদাভাবে থাকতে পারে না । বস্তুত অতীন্দ্রিয় সত্তাই চেতনার মধ্য দিয়ে আবভাসিক সত্তা রূপে আত্মপ্রকাশ করে । 

কান্টের মতানুযায়ী পরিদৃশ্যমান আত্মা ও অতীন্দ্রিয় আত্মা পরস্পর থেকে আলাদা । ব্যক্তিভেদে পরিদৃশ্যমান আত্মার ভিন্ন ভিন্ন রূপ । কিন্তু অতীন্দ্রিয় আত্মা সকলের মধ্যে একই । কিন্তু অতীন্দ্রিয় আত্মা এবং পরিদৃশ্যমান আত্মার যে যােগসূত্র কান্ট তার যথার্থ ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি । এই যােগসূত্র প্রতিষ্ঠা করেন হেগেল । তার মতে পরমাত্মা হল পরমসত্তা এবং জীবাত্মা পরমাত্মারই খণ্ড প্রকাশ । জীবাত্মা পরমাত্মা থেকে উদ্ভূত এবং জীবাত্মার মধ্য দিয়েই পরমাত্মা নিজেকে প্রকাশ করেছে । জড়বস্তু ও জীবাত্মা উভয়ই পরমাত্মা বা পরমব্রত্মের প্রকাশ এবং সেই কারণে তারা প্রধানত অভিন্ন । এই কারণে জীবাত্মার পক্ষে বস্তুর জ্ঞানলাভ করা সম্ভব । 

হেগেলের মতানুযায়ী পরমতত্ত্ব হল পরাত্মা , পরমব্রত্ম বা পরম ধীশক্তি । পরমতত্ত্ব হল সর্বত্র বিস্তারমান আধ্যাত্মিক সত্তা বিশেষ । হেগেলের মতে নিজসত্তাকে জগৎ আকারে প্রকাশ করে । জীবজগতের সৃষ্টির মাধ্যমে পরমতত্ত্ব স্বপ্ৰকাশ চৈতন্য বা আত্মারূপে প্রকাশ করে থাকে । সুতরাং জীবজগৎ শুধুমাত্র মানসিক ধারণা নয় ।

এই পরমাত্মা বা পরব্রহ্লা এবং সক্রিয় । এই পরমাত্মার বৈশিষ্ট্যই হল নিজেকে বিকশিত করা । পরব্রহ্লা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতেই নিজেকে প্রকাশ করে থাকে । বিরােধ দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ই হল তার প্রকাশের প্রথা । এই পরম ধীশক্তি হল পূর্ণ । কারণ জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় , জীব ও জড়বস্তু নিয়ে গঠিত এই বিশ্বজগতই হল পরম ধীশক্তির জ্ঞানের বস্তু । জগৎ ও পরমব্রম্ম পরস্পর সাপেক্ষ , উভয়ের মধ্যে যে সম্বন্ধ সেই সম্বন্ধ আঙ্গিক বা অবিচ্ছেদ্য । সেই কারণেই হেগেলের প্রখ্যাত উক্তি হল — ‘যা বৌদ্ধিক তাই বাস্তব , যা বাস্তব তাই বৌদ্ধিক ।’ সুতরাং , যার বাস্তব সত্তা আছে তা চেতনা সত্তার প্রকাশ এবং চেতনাসত্তা মাত্রই বাস্তবসত্তায় তা প্রকাশিত হয় । 
 

হেগেল যদিও বুদ্ধি এবং সত্তার একত্বকে স্বীকার করেন , তাও এ আত্মগত ভাববাদ বা আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ নয় । পরমাত্মা বা পরমব্রত্মের অস্তিত্ব বস্তুকে স্বীকার করে নিয়ে হেগেল তাঁর মতানুযায়ী পরমসত্তা পরমচেতনা সত্তা । আবার তাঁর এই মতবাদকে বস্তুগত ভাববাদও বলা হয় । কেননা , যে পরমচেতনা সত্তা থেকে বস্তুজগৎ ও জীবজগৎ উদ্ভুত , উভয়েরই স্বতন্ত্র সত্তা আছে । বস্তুজগৎ বা জীবজগৎ ব্যক্তি চেতনার সৃষ্টি নয় ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন