অষিবিদ্যার বিষয়বস্তু আলােচনা কর ।

Clg philosophy questions answers কলেজ দর্শন প্রশ্নোত্তর অষিবিদ্যার বিষয়বস্তু আলােচনা কর ashibiddar bishoybostu alochona koro


উত্তর : যে শাস্ত্র পরম সত্তার বা পরম তত্ত্বের স্বরুপ নিয়ে আলােচনা করে এবং পরম সত্তার সঙ্গে পদার্থ , মন , জীবন ইত্যাদির সম্বন্ধ নির্ণয় করে তাকেই বলে অধিবিদ্যা । অধিবিদ্যা হল পরম সত্তা বা পরম তত্ত্ব সম্পকীয় বিদ্যা । দর্শনের একটি উল্লেখযােগ্য শাখা হল অধিবিদ্যা । অধিবিদ্যার ইংরাজি প্রতিশব্দ হল Metaphysis . ইংরাজি এই Metaphysis- এর ধাতুগত অর্থ হল সেই আলােচনা যা পদার্থবিদ্যার পরে আসে ( Meta = after , Physis = Physika ) । কাজেই অধিবিদ্যার আলােচনা ভৌতিক জগতের সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায় । ঈশ্বর , আত্মা , অমরত্ব প্রভৃতি অধিবিদ্যার আলােচ্য বিষয় । এইসব বিষয় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এবং এদের আলােচনা ভৌতিক জগতের সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায় ।  অর্থাৎ যা অপার্থিব , যা ইন্দ্রিয়উধর্ব তাই নিয়েই অধিবিদ্যার আলােচনা করা হয় । 

এখন প্রশ্ন , এই পরম সত্তার আলোচনা বা বলতে কি বােঝায় ? অবভাসে অর্থাৎ বস্তু যেভাবে আমাদের কাছে প্রতিভাত হয় এবং বস্তুর যথাযথ রূপ সত্তার পার্থক্য নিয়ে অধিবিদ্যার আলােচনা শুরু হয় । প্রতি বস্তুর দুটি রূপ । একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ বা বাহ্যসত্তা অর্থাৎ অবভাসে এবং আর একটি অতীন্দ্রিয় রূপ বা বস্তুর অন্তর সত্তা বা বস্তুর যথাযথ রূপ । 


বস্তুর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপটি নিয়ত পরিবর্তনশীল । কিন্তু এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রুপটির আড়ালে এমন একটি পরিবর্তনীয় ইন্দ্রিয়াতীত সত্তা আছে যাকে অস্বীকার করলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না । অধিবিদ্যা প্রধানত এই ইন্দ্রিয়াতীত সত্তা নিয়ে আলােচনা করে । 


বিষয়বস্তু : অধিবিদগণ বস্তুর প্রকৃত সত্তা নির্ধারণের চেষ্টা করেন । প্রকৃত সত্তার আলােচনাকে তত্ত্ব আলােচনা বলা হয় এবং তত্ত্ববিদ্যা বা ইংরাজি প্রতিশব্দ “Onto - logy” দিয়ে তা বােঝানাে হয় ।বস্তু সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি , তা বস্তুর যথার্যরূপ নয় । যেমন — এক গ্লাস জলে আমরা একটি লম্বা সরল কাঠি ডুবিয়ে রাখলে দেখি যে, কাঠিটি বাঁকা , কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাঠিটি সােজা । দূর থেকে পাহাড়কে নীল দেখায় । কিন্তু  নিকটে গেলে দেখা যায়, পাহাড়টি ধুসর বর্ণের । কাজেই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় বস্তু সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি সেটিই বস্তুর প্রকৃত রূপ তা বলা যায় না । বাস্তব জগতের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ অবভাস এবং তার ইন্দ্রিয় অগম্য , বুদ্ধিগাহ্য বা স্বজ্ঞালন্ধ রূপ বা প্রকৃত সত্তার মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তিতে অধিবিদ্যার আলােচনার সূত্রপাত হয় । 

অধিবিদ্যা অতি ব্যাপক এবং মৌলিক বিষয়গুলিকে নিয়ে আলােচনা করে । অধিবিদ্যাকে অতি ব্যাপক বলতে গিয়ে বােঝানাে হয় যে , পদার্থবিদ্যা , গণিতশাস্ত্র প্রভৃতি বিজ্ঞানগুলি জাগতিক অভিজ্ঞতার বিশেষ বিশেষ দিক নিয়ে আলােচনা করে , কিন্তু অধিবিদ্যা সমগ্রভাবে জগতকে নিয়ে আলােচনা করে । উদাহরণস্বরূপ কোন বিশেষ বিজ্ঞান জড়বস্তুর গঠন বা মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রধান কার্যগুলিকে নিয়ে আলােচনা করে । আবার প্রত্যেক বিজ্ঞানেরই কিছু প্রাক-স্বীকৃতি আছে । যেমন , গণিতবিক্ষণ জোড় - বিজোড় সংখ্যার অস্তিত্ব , তিন প্রকার ত্রিভুজের অস্তিত্ব , দেশ কালের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন , কিন্তু অধিবিগণ কোনপ্রকার পূর্বস্বীকৃতি ছাড়াই অগ্রসর হন । 


অধিবিদ্যার আলােচনায় অনেক সময় দাবী করা হয় যে , এক বিশেষ ধরনের মরমী অভিজ্ঞতার দ্বারা অতিন্দ্রিয় পরম সত্তাকে লাভ করা সম্ভব । মধ্যযুগীয় দার্শনিক ও অধিবিদ্যার প্রধান আলােচ্য বিষয়গুলি অতি ব্যাপক , মৌলিক এবং পূর্ব-স্বীকৃতি বর্জিত । দেশ , কাল , কার্যকারণ , ঈশ্বর , আত্মা , পরম মূল্যের স্বরূপ, সত্যের স্বরুপ , প্রকৃত সত্তাকি  , প্রকৃত সত্তা এক না বহু প্রভৃতি বিষয় অধিবিদ্যায় প্রধানত আলােচিত হয় ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন