উত্তর : দ্রব্য বলতে সাধারণ মানুষ এমন কিছুকে বােঝে , যার গুণ আছে ,শক্তি আছে , অবস্থা আছে , পরিবর্তন আছে , অন্য কিছুর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার বা বিচ্ছিন্ন হবার ক্ষমতা আছে এবং এই সবের মধ্য দিয়ে যা নিজেকে প্রকাশ করতে পারে ।
অ্যারিস্টটলের রচনায় গ্রিক শব্দ ‘Ousia'- র উল্লেখ রয়েছে , যার দ্বারা তিনি ‘ Substance ' বা দ্রব্য - কে বুঝিয়েছেন । প্রাচীন গ্রিক চিন্তাবিদা অবশ্য ‘Ousia' শব্দটির দ্বারা ধন -সম্পদ বা দ্রব্য-কে বুঝিয়েছেন ।
ইংরাজি ‘ Substance ' বা প্রতিশব্দ দ্রব্য-এর আক্ষরিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দুটি অর্থ সুস্পষ্ট হয়— ( i ) দ্রব্য = সম্পদ ( property ), ( ii ) দ্রব্য = কোন কিছুকে ধরে রাখা— এই অর্থে দ্রব্য হচ্ছে আধার বা ধারক ।
Metaphysics গ্রন্থ অনুসরণ করে দ্রব্যের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল –
( i ) অ্যারিস্টটল বলেন দ্রব্য স্ব-নির্ভর, স্ব-সত্তাবান । অ্যারিস্টটলের মতে অধিবিদ্যার প্রধান আলােচ্য বিষয় হচ্ছে সত্তা বা অস্তিত্বের প্রকৃতি । বিভিন্ন ধরনের সত্তা — যেমন গুণ , ক্রিয়া , দ্রব্য প্রভৃতি সত্তাগুলির মধ্যে দ্রব্যেরই প্রকৃত সত্তা আছে বলা হয় । দ্রব্যের সত্তার জন্য গুণ , ক্রিয়া , অবস্থা প্রভৃতি সত্তা বা অস্তিত্ব সম্ভব অর্থাৎ , অ্যারিস্টটলের মতে দ্রব্য হচ্ছে তাই যা মুখ্যত এবং নির্বিশেষভাবে সত্তাবান অর্থাৎ স্বসত্তাবান বা স্ব-নির্ভর ।
( ii ) মুখ্য অর্থে দ্রব্য হচ্ছে বিশিষ্ট মূর্তবস্তু এবং গৌণ অর্থে দ্রব্য হচ্ছে বস্তু শ্রেণি জাতি ও প্রজাতি বা উপজাতি ।
মুখ্য অর্থে দ্রব্য বলতে অ্যারিস্টটল বিশিষ্ট মূর্ত বস্তুকে বুঝিয়েছেন , ক্ষিতি , অপ , তেজ প্রভৃতি প্রাথমিক মূর্ত যাবতীয় বিশিষ্ট মূর্ত বস্তু । যেমন — এই প্রাণী , এই ঘােড়া , এই মানুষ , সক্রেটিস প্রভৃতি । এমনকি বিশেষ নক্ষত্র প্রভৃতি প্রাথমিক মূর্ত যাবতীয় বিশিষ্ট মূর্ত বস্তু । যেমন — এই প্রাণী , এই ঘােড়া , এই মানুষ সক্রেটিস প্রভৃতি; এমনকি বিশেষ নক্ষত্র প্রভৃতি প্রাকৃতিক বস্তুসমূহকে দ্রব্য বলা হয় ।
( iii ) সারসত্তা বা সারধর্ম , সামান্য , জাতি এবং আধার এই চারটির মধ্যে কোন্টিকে প্রকৃতপক্ষে দ্রব্য বলা যায় এবং কি অর্থেই বা দ্রব্য বলা যায় — অ্যারিস্টটল ‘অধিবিদ্যা’ গ্রন্থে তার বিস্তৃত আলােচনা করেছেন ।
‘আধার’ প্রসঙ্গে অ্যারিস্টটল বলেছেন যে , যদি নিছক জড় উপাদানকে আধার বলা হয় , তাহলে তা দ্রব্য নয় । বিশুদ্ধ জড় নিছক উপাদানরূপে আধার হতে পারে না । একমাত্র বিশিষ্ট মূর্ত দ্রব্য ( যেমন এই টেবিল , এই মানুষ , এই ঘােড়া প্রভৃতি ) গুণ , ক্রিয়া অবস্থা নামক অন্যান্য বিধেয়গুলির আধার ও উদ্দেশ্য হতে পারে । তবে সারসত্তা বিশিষ্ট মূর্ত দ্রব্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে না ।
অ্যারিস্টটল যাকে সারসত্তা ( essence ) বলেছেন , প্লেটো তাকে সামান্য বা আকার বলেছেন । অ্যারিস্টটলের মতে কেবল জাতি বা শ্রেণির দ্বারা দ্রব্যের সারধর্ম বা সারসত্তাকে প্রকাশ করা যায় না । দ্রব্য বলতে বিশিষ্ট মূর্ত দ্রব্যকে বােঝাতে গেলে জাতি ছাড়াও বিভেদক লক্ষণের উল্লেখ করতে হবে । বিশিষ্ট মূর্ত দ্রব্যের উপর অ্যারিস্টটল বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন — এ কথা স্বীকার করলে জাতিকে মুখ্য অর্থে দ্রব্য বলা যায় না ।
( iv ) অ্যারিস্টটল বলেন , আকার বিমুক্ত বা সামান্য ধর্ম বিযুক্ত বিশুদ্ধ জড় উপাদান যেমন দ্রব্য নয় , তেমন উপাদান বিযুক্ত নিছক আকার বা সামান্য ধনও দ্রব্য নয় , এমনকি জাতিকেও মুখ্য অর্থে দ্রব্য বলা যায় না । তার মতে কোন বস্তুর সারবত্তার জন্যই বস্তুটিকে দ্রব্য বলা যায় ।