প্রশ্ন : সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কী ? বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন ?
উত্তর : সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য হল
Sl NO | সকাম কর্ম | নিষ্কাম কর্ম |
---|---|---|
( i ) | নিষ্কাম কর্মের উপর অধিকার স্থাপন হয় স্থাপন হয় । | নিষ্কাম কর্মের উপর জীবের অধিকার স্থাপন হয় না । |
( ii ) | সকাম কর্মে জীবের মধ্যে অহংবােধ কাজ করে , এবং এইজন্য জীব শুধু আমার আমার করে । | নিষ্কাম কর্মে জীবের মধ্যে অহংবােধ থাকে না , এখানে জীব ঈশ্বর নিবেদিত প্রাণ । |
( iii ) | সব কাজ নিজ স্বার্থেসম্পাদিত হয় । | সব কাজ ঈশ্বরে সমর্পিত । |
( iv ) | এখানে ফলের আকাঙ্ক্ষা থাকে । | এখানে ফলের আকাঙ্ক্ষা থাকে না । |
নিষ্কাম কর্মের ব্যাখ্যা : বিবেকানন্দও নিষ্কাম কর্মের অনুশীলনের কথা বলেছেন , কর্মফলের প্রতি আসক্তি পরিত্যাগ করে , অর্থাৎ অনাসক্তভাবে কর্ম সম্পাদনই নিষ্কাম কর্মের অর্থ । আসক্তি বর্জনের দুটি পথ আছে । একটি হল কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পণ করা । যারা ঈশ্বরবাদী তারা এই পথের কথা বলেন । তারা বলেন — পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্মফল অর্পণ করলে ফলের প্রতি আসক্তি থাকে না । গীতা এইরূপ নিষ্কাম কর্মের আদর্শ প্রচার করেছেন । দ্বিতীয় পথের অনুসারী ব্যক্তিরা বলেন নিজের ইচ্ছাশক্তি , মনের শক্তি ও বিচার বিশ্লেষণ অনুযায়ী কর্ম করলে কর্ম অনাসক্ত হবে । অনাসক্ত কর্ম জগতের মঙ্গলসাধন করে জীবনকে মহৎ করে , মহৎ ব্যক্তিরা জগতের মঙ্গলের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেন ।
জ্ঞানী ব্যক্তি নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠান করেন । যে ব্যক্তি দুঃখে স্থির , সুখে স্পৃহাহীন ও আসক্তিশূন্য , ভয়শূন্য , ক্রোধশূন্য তিনিই বুদ্ধিমান , স্থিতপ্রজ্ঞ ।থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি শুভ ফলে উদাসীন । তাঁর মন সংযত , ইন্দ্রিয় মনের বশীভূত । কচ্ছপ যেমন নিজের অঙ্গকে সঙ্কুচিত করে দেহ মধ্যে গুটিয়ে রাখে , সেইরকম স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি ইন্দ্রিয়গুলিকে বিষয়ভােগের বস্তু থেকে ফিরিয়ে আনেন , তিনি শান্তির অধিকারী । কিন্তু বিষয়কামী ব্যক্তি কখনও শান্তি পায় না । তার ইন্দ্রিয়গুলি সর্বদা বিষয়ভােগে ধাবিত । তার সব কমই সকাম ।