মানুষের ধর্ম বিষয়ে রবীন্দ্র চেতনা কি ছিল ?

অনাস পাস দর্শন honours pass general philosophy questions answers প্রশ্নোত্তর মানুষের ধর্ম বিষয়ে রবীন্দ্র চেতনা কি ছিল manusher dhormo bishoye robindro chetona ki chilo questions answers


উত্তর : রবীন্দ্রভাবনা : রবীন্দ্রনাথ ধর্ম বলতে মানুষের ধর্মকে বুঝিয়েছেন । রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে এই মানুষের ধর্ম বা মানবতাকে জোরালােভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন , “ Religion of Man ” গ্রন্থে( মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে )রবীন্দ্রনাথ মানবতার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছেন । রবীন্দ্রনাথই প্রথম চিন্তানায়ক যিনি মানবতাকে প্রকৃত ধর্ম হওয়া বলে মনে করেছেন । রবীন্দ্রনাথের আগে বৌদ্ধ, খ্রিস্ট, ইসলাম ও হিন্দুধর্মের বহু গ্রন্থে মানবতাবাদের সন্ধান পাওয়া যায় । পাশ্চাত্য দার্শনিক কোত ছাড়াও রামেমােহন , রামকৃষ্ণ , বিবেকানন্দ প্রমুখদের লেখা ও বাণীতে মানবতাবাদ ধ্বনিত হয়েছে । 


আরও ভাবনা : “মানুষের ধর্ম” প্রবন্ধ থেকে জানা যায় রবীন্দ্রনাথ মানুষের মধ্যে দুটি সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন । জীবসত্তা এবং মানবসত্তা । পরবর্তী পর্যায়ে এই মানব সত্তাকেই তিনি পরমসত্তা বলে অভিহিত করেন । তিনি বলেছেন — মানুষ জীবরূপে বাঁচতে চায় ব্যবহারিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য , এ বাঁচার পিছনে থাকে কামনা । রবীন্দ্রনাথ একেই জীবসত্তা বলেছেন । কিন্তু মানুষের মধ্যে আছে ‘মান হুষ’ এর সমন্বীয় অর্থাৎ মানুষ শুধু নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঁচতে পারে না । মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্ববােধ । রবীন্দ্রনাথ ‘মানুষের ধর্ম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন— “স্বার্থ” আমাদের যে সব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীব প্রকৃতিতে ; যা আমাদের ত্যাগের দিকে তপস্যার দিকে , নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম”। মানুষের মধ্যে যে সত্তা ও জীব সত্তা আছে এর ফলেই মানুষের মধ্যে দুটি ভাবের উদয় ঘটেছে । একটি হল জীবভাব , অন্যটি হল বিশ্বভাব । জীবভাবের জন্যই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক । ‘অহং’এর বাইরের বিশ্ব সম্বন্ধে যে উদাসীন । আর বিশ্বভাব নিয়ে যে মানবতা মানুষের মধ্যে বিরাজ করে তা এক বিশ্বব্যাপী আদর্শের আলােকে উদ্ভাসিত । 

সীমার মাঝে অসীম : মানুষের মধ্যে যে দুটি ভাবের কথা রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন তা তার লেখা একটি কবিতায় ব্যক্ত করেছেন — 

    “সীমার মাঝে , অসীম , তুমি বাজাও আপন সুর ।
     আমার মধ্যে তােমার প্রকাশ তাই এত মধুর ।” 
     
রবীন্দ্র অনুভূতিতে পাওয়া যায় মানুষ বলতে ব্যক্তিমানুষকে বােঝায় না । মানুষ হল বিশ্বগত মানুষের একাত্মা । বিশ্ব মানবের প্রেরণাতেই মানুষ এমন কিছু করতে প্রবৃত্ত হয় যা ভৌতিক জগতের সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায় । তাইতাে আর একটি কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে — 

            “দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান ।”

মানুষের দায় মহামানবের দায় । কোথাও তার সীমা নেই । 




মূল্যায়ন : রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তি মানুষের মধ্যে মানবতার বীজটি রােপন করে তাকে বিশ্বমানবতার দ্বারে উন্নীত করেছেন । এই বীজটি একদিন ফলে , ফুলে সৌন্দর্যে মহীরূহে পরিণত হবে । এই আশা রবীন্দ্রনাথের মনে সুনির্দিষ্টভাবে বাসা বেঁধেছিল ‘মানবতার প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথবলেছেন — দেবতা বা ঈশ্বর নয় , এখানে শুধুই মানুষ । মানুষ আর মানুষ । তাইতাে ধ্বনিত হয়েছে ‘আমরা সবাই রাজা’ বা সকলে আমরা সকলের তরে ।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন