উত্তর : জ্ঞাতা যা জানে তাকেই ‘বস্তু’ বলে মনে করা হয় । দর্শনের ইতিহাসে এই বস্তুকে নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে । তত্ত্বগুলির মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায় । তবে তত্ত্বগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । ভাববাদ ও বস্তুবাদ ।
মুখ্য ও গৌণগুণ : বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদের প্রবর্তক হলেন লক । বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদ সরল বস্তুবাদের মতােই জ্ঞানাতিরিক্ত বস্তুর স্বতন্ত্র সত্তা স্বীকার করে নেয় । লকের মতে বস্তু কতকগুলি গুণের সমষ্টি । গুণগুলিকে তিনি দুইভাগে ভাগ করেছেন — মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ । মুখ্যগুণগুলি বাহ্যবস্তুতে প্রকৃতই অস্তিত্বশীল । গৌণ গুণগুলির বস্তুতে কোন অস্তিত্ব নেই । এগুলি বস্তু নিরপেক্ষ এবং ব্যক্তিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে । বিস্তৃতি আকার , আয়তন , গতি হল মুখ্য , আর বর্ণ , স্বাদ , গন্ধ হল গৌণ ।
শ্রেণিবিভাগের পক্ষে যুক্তি : এই শ্রেণিবিভাগের স্বপক্ষে কতকগুলি যুক্তির অবতারণা করেছেন ।
প্রথমত । গৌণ গুণগুলি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন রকম । যেমন কোন জিনিসের স্বাদ কারও কাছে মিষ্টি , আবার কার কাছে মিষ্টি নাও লাগতে পারে ।
দ্বিতীয়ত । গৌণ গুণগুলি পরিবর্তনশীল । কখনও কখনও অদৃশ্যও হয়ে যায় । কিন্তু মুখ্য গুণগুলি পরিবর্তনশীল নয় ।
মুখ্য গুণ বস্তুগত , গৌণ গুণ মনােগত । সুতরাং মুখ্য গুণগুলি বস্তুগত এবং গৌণগুলি মনােগত । এই মুখ্য গুণগুলি আমাদের মনে সংবেদন সৃষ্টি করে । গৌণ গুণগুলি কেবলমাত্র সংবেদনগুলির বস্তুগত — প্রকৃত গুণ নয় । যেহেতু এগুলি বস্তুর সত্তাতে নেই । লক্ বলেন আমাদের মনের বাইরে এই যে বাহ্য জগতের অস্তিত্ব , সেই জগত না মিষ্টি — না টক , না উজ্জ্বল , না অন্ধকার , না উষ্ণ — না শীতল , কিন্তু বস্তু বিস্তৃত এবং অভেদ্য । স্থির বা গতিময় । লক এই গুণগুলির আধার হিসাবে দ্রব্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন ।
বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলার কারণ : যেহেতু এই সময়কার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রভাব এই মতবাদের উপর পড়েছিল এবং মুখ্য ও গৌণ গুণগুলির পার্থক্য তৎকালীন স্বীকৃতি লাভ করছিল সেইহেতু এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলা হয় ।
ভারতীয় দর্শনে সমর্থন : ভারতীয় ন্যায় বৈশেষিক দার্শনিক গােষ্ঠীর মতবাদে যেমন সরল বস্তুবাদের সন্ধান পাওয়া যায় সেইরূপ বৌদ্ধ সৌভ্রান্তিক গােষ্ঠীর মতবাদেও বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের সন্ধান মেলে ।